প্রতিবছরই পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয় নেত্রকোণার পাহাড়ি সীমান্তবর্তী ও হাওর বিস্তৃত উপজেলা কলমাকান্দা। নদীর তীরবর্তী মনতলা গ্রামের বাসিন্দা জোসনা বেগমের বসতভিটা ডুবেছে ঢলের জলে। কিছুটা কমলেও বাড়ির চারপাশে এখনও পানি। অর্থের অভাবে বসত বাড়ি উঁচু করতে না পারায় গেলো তিন বছর বানভাসি হতে হয়েছে তাদের। জানান প্রতিবার আশায় বসে থাকলেও কখনো পাননি ত্রাণ সহায়তা।
জোসনা বেগম বলেন, 'ঘরে পানি ঢুকে যায়। ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। চুলা তো বন্ধ থাকে, খাবার কিছু থাকে না। অনেক কষ্টে জীবন যাচ্ছে এখন।'
জোসনা বেগমের মতো উপজেলা সদরের নয়াপাড়া শ্মশান ঘাট এলাকা দ্বিতীয় দফা ডুবেছে ঢলের পানিতে। বাড়িতে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে আছে রান্নাসহ ও দৈনন্দিন কাজ। সাথে বেড়েছে খরচের পাল্লা।
জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সাথে পাহাড়ি ঢলে তলিয়েছে মনতলা ইসুবপুর সড়কসহ উপজেলার বড়খাপন, খারনৈসহ ৮টি ইউনিয়নের অন্তত ৫৯টি গ্রাম।
এ অঞ্চলের বিভিন্ন পাহাড়ি ঝর্ণা ছড়া ও নদ-নদীর পানি উব্দাখালী নদী হয়ে মিলিত হয় সুনামগঞ্জের হাওরে। তবে, গেল কয়েক বছরের মেঘালয়ের ভারী বর্ষণে এই পানি নামতে দেরি হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘ দিন খনন না হওয়ায় এ অঞ্চলের খরস্রোতা নদী এখন নীরব শান্ত।
স্থানীয় একজন বলেন, 'আমরা এখন রান্না করতে পারি না। খাইতে পারি না ঠিকমতো। একটা রুমের ভেতর বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে থাকি কয়েকজন মিলে। আমাদের এভাবে থাকা আর না থাকা একই কথা।'
পাহাড়ি ঢল বা বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রান্তিক কৃষকরা। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য।
নেত্রকোণা কলমাকান্দা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব জহিরুল ইসলাম মোস্তাক বলেন, 'নদী খনন করলে আর নদীতে বাঁধ দিলে আমরা এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি। এর ফলে আমরা ব্যবসায়ীরা স্বস্তি পাবো।'
এ অঞ্চলের মানুষদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে নদী খননসহ তিনটি মন্ত্রণালয়ে ১২টি সুপারিশ পাঠানোর কথা জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য।
নেত্রকোনা-১ আসনের সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহি বলেন, 'এলাকার এই বিষয় নিয়ে আমরা মিটিং করেছি। এবং তারপর মন্ত্রণালয়ে ১২টি সুপারিশ প্রেরণ করা হয়েছে। এর পরের করণীয় কী তার ফলো আপও নিচ্ছি।'
কৃষি, মৎস্য, সড়ক ও সেতু বিভাগের হিসেবে গত ২ বছরসহ এবারের বন্যায় সব মিলিয়ে অন্তত শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতিতে।