বিদেশে এখন
0

কথায় কথায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে চাপে থাকে যুক্তরাষ্ট্র!

আগ্রাসন থেকে একে অপরকে রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে নতুন চুক্তি করেছে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া। স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দুই দেশের মধ্যে এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী চুক্তি। পশ্চিমাদের সঙ্গে দেশ দুটির অচলাবস্থার মধ্যে চুক্তিটি হলো। ন্যাটো বলছে, এই ধরনের চুক্তি কর্তৃত্ববাদী শাসনকে জোরদার করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কথায় কথায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে সবসময় চাপে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।

উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া দুই দেশই কূটনৈতিকভাবে বাকি বিশ্ব থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন। এই পরিস্থিতিতে পুতিনের উত্তর কোরিয়া সফর দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা পেয়েছে। করোনা মহামারির পর এই প্রথম কোনো বিশ্ব নেতা উত্তর কোরিয়ায় গেলেন। পিয়ংইয়ং হামলার শিকার হলে সামরিক সহায়তা দেবে মস্কো। ১৯৬১ সালের সেই চুক্তিটি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ভেস্তে যায়। এরপর ২০০০ সালে আরেকটি চুক্তি হলেও এতে নিরাপত্তার বিষয়টি ততটা জোরালো ছিল না।

মঙ্গলবার (১৮ জুনন) ২৪ বছর পর দুই দিনের সফরে উত্তর কোরিয়া গেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। দেশটির নেতা কিম জং উনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কৌশলগত প্রতিরক্ষার একটি নতুন চুক্তি সই হয়। আগ্রাসনের মুখোমুখি হলে একে অপরকে রক্ষা করার অঙ্গীকার করে উভয় দেশ। পশ্চিমাদের সঙ্গে দেশ দুটির চলমান অচলাবস্থার মধ্যে এই চুক্তি হলো। ধারণা করা হচ্ছে, স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশ দুটির মধ্যে এটি সবচেয়ে শক্তিশালী চুক্তি।

এই চুক্তিকে সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন মাত্রা হিসেবে দেখছেন দুই নেতা। যার আওতায় আছে নিরাপত্তা, বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিনিয়োগ, সাংস্কৃতিক ও মানবিক সব ধরনের বন্ধন। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার বিষয়টিও তুলে ধরেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, 'পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়েছে। যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে। উত্তর কোরিয়াকে রক্ষায় পদক্ষেপ নেবে রাশিয়া।'

এদিকে কিম জং উন জানান, রাশিয়া যুদ্ধের মুখে পড়লে কোনো দ্বিধা ছাড়াই এর জবাব দেবে উত্তর কোরিয়া। দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া চুক্তিকে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও আত্মরক্ষামূলক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'নিঃসন্দেহে চুক্তিটি অত্যন্ত গঠনমূলক, শান্তিপ্রিয় ও প্রতিরক্ষামূলক। যার লক্ষ্য দুই দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা। আধিপত্য, পরাধীনতা এবং একতরফা কর্তৃত্ব থেকে দুই দেশকে মুক্ত করবে চুক্তিটি।

ইউক্রেনে দূরপাল্লার অস্ত্র ও এফ-সিক্সটিন যুদ্ধবিমান সরবরাহ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সামরিক জোট ন্যাটোর সহায়তার বিষয়ও দুই নেতার আলোচনায় উঠে আসে। যদিও ন্যাটো বলছে, এই ধরনের চুক্তি কর্তৃত্ববাদী শাসনকে জোরদার করবে। যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, 'কর্তৃত্ববাদী শক্তিগুলো আরও বেশি সংঘবদ্ধ হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সবার সচেতন হওয়া দরকার। দুই দেশই তাদের স্বার্থ রক্ষায় চুক্তি করেছে। যা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।'

ইউক্রেনের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে রাশিয়ার অস্ত্র প্রয়োজন। এখন অস্ত্রের বড় একটি চালান আসবে উত্তর কোরিয়া থেকে। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা পিয়ংইয়ং খাদ্য, জ্বালানি এবং উন্নত অস্ত্রের জন্য রাশিয়ার সমর্থন পাবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কথায় কথায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে সবসময় চাপে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। গত কয়েক দশক ধরেই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টায় আছে রাশিয়া। পশ্চিমা বিরোধী মনোভাব আর ইউক্রেন যুদ্ধ দেশ দুটিকে আরও কাছে এনেছে। পুতিনের এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে বেশি মজবুত করেছে।