অর্থনীতি
0

সীমান্তে নাকফুল বন্ধক দিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ!

যুদ্ধের মধ্যে যেখানে জীবন বাঁচানোই দায়, সেখানে এনজিওর ঋণের কিস্তির চাপে দিশেহারা সীমান্তের নিম্ন আয়ের মানুষ। কর্মহীন হয়ে পড়া পরিবারে খাদ্যের জোগান দিতে না পারলেও, ঋণ পরিশোধে চাপ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অগত্যা কেউ ধার, কেউ জমানো স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে শোধ করছেন কিস্তির টাকা।

হোয়াইকংয়ের নুর নাহার বেগম। ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে, প্রতি সপ্তাহে ১৮০০ টাকা পরিশোধ করেন। হুমকি ধমকির পর নাকফুল বন্ধক দিয়ে টাকা শোধ করেন। যুদ্ধের এ অবস্থায়ও এনজিওর ঋণের দায় থেকে মুক্তি মিলছেনা তাদের।

নুর নাহার বেগম বলেন, 'তিন বছরের মধ্যে কখনো এক সপ্তাহ বাদ দেই নাই। এখন আমরা সমস্যায় পড়ছি কিভাবে টাকা দিবো? আমাদের পেটে ভাত নাই। আমার স্বামীকে নাকফুলটা দিয়া বাজারে পাঠাই। ওইটা বন্ধক দিয়া টাকা পরিশোধ করছি।'

এ অবস্থা কক্সবাজার সীমান্তের কয়েক হাজার নিম্ন আয়ের মানুষের। সীমান্তে ফসলের মাঠ, চিংড়ি ঘের বা নাফ নদীতে মাছ ধরে চলে সংসার। ফসলের মাঠে শুনশান নীরবতা, নাফ নদীতে মাছ ধরার নৌকা আর জালও পড়ে নষ্ট হচ্ছে।

দুই সপ্তাহ ধরে কাজ নেই, তাই সীমান্তে ফসলের মাঠে যুদ্ধের গল্প গুজব করে অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা।

আয় না থাকায় এদের অনেকের যখন চুলা জ্বলছেনা, দুইবেলা খাবার জোগাচ্ছেন ধারদেনা করে, তখন মড়ার ওপর খড়ার ঘাঁ হয়ে দেখা দিয়েছে কিস্তির ঋণ।

এখন টিভিকে নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছেন ঋণগ্রস্ত নুর নাহার বেগম

স্থানীয়রা বলেন, 'গোলাগুলির কারণে নদীতে মাছ ধরতে যাইতে পারি না। আর্থিক অবস্থা বেশি খারাপ। সমিতি লোকেরা কিস্তির জন্য আসে। কোন কথা মানতে চায় না, নির্যাতন করে। আমাদের কামাই নাই, খাওয়ার মতোই টাকা নাই। কিস্তির টাকা কোত্থেকে দিবো।'

হোয়াইকং এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, যারা ঋণ নিয়েছেন সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। এ অবস্থায় টাকা শোধ করতে ধার কর্জ করছেন অনেকে। তাদের অভিযোগ সীমান্তে মরে গেলেও কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে, এমন চাপ দিচ্ছে এনজিওর কর্মকর্তারা। বসে থাকছে রাত পর্যন্ত।

হোয়াইকং এলাকার একজন বলেন, 'দীর্ঘদিন পর্যন্ত কিস্তি চালাইছি। গতকাল টাকা দিতে পারি নাই বলে এনজিওর লোকেরা আমার বাড়িতে রাত নয়টা পর্যন্ত বসা ছিলো। পরে অন্য জায়গা থেকে ধার নিয়া কিস্তি দিছি। কিন্তু আমার ঘরের চুলা জ্বলে নাই।'

যুদ্ধকালে কর্মহীন মানুষ থেকে ক্ষুদ্র ঋণ আদায়ের নিয়ম আছে কিনা তা জানতে পালংখালীর প্রত্যাশী এনজিওতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা রাজীব ঘোষ জানান, এভাবে জোর জবরদস্তি করার বিষয় তার জানা নেই। পরিস্থিতি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'দেখা গেছে ১০০ পরিবারের মধ্যে ১০ জনের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আমরা একটু চাপাচাপি করি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের চাপাচাপির এমন কোন নির্দেশনা নাই।'

এ অবস্থায় যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ঋণ থেকে মুক্তি পেতে সরকারের সহযোগিতা চান তারা। প্রত্যাশী নামক এনজিওটি থেকে সীমান্তে ঋণ নিয়েছে প্রায় ৭ হাজার পরিবার।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর