প্রায় ২৫ বছর আগে মালয়েশিয়ার শূকর খামারিদের মধ্যে নিপাহ ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়। সে সময় সিঙ্গাপুরেও ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণে মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। শুধু বাংলাদেশেই গত ২২ বছরে ভাইরাসটিতে মানুষের মৃত্যুহার ৭১ শতাংশ।
মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টিকারী প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আজও অজানা। তবে অনেকদিন ধরেই টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। তবে প্রথমবারের মতো গেল সপ্তাহে মানবদেহে সম্ভাব্য নিপাহ টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ভাইরাসটির সংক্রমণ বেশি হয় ভারতের কেরালাসহ এশিয়ার এমন কয়েকটি অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে টিকার প্রয়োগ শুরু করেছে একদল গবেষক।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গত সপ্তাহে পরীক্ষামূলক নিপাহ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মুখপাত্র জানান, আপাতত ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ৫১ জন ব্যক্তির দেহে টিকাটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা পরীক্ষা করে দেখবেন গবেষকরা। এরপর নিপাহ ভাইরাসে ভুক্তভোগী দেশগুলোতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা চালানো হবে।
গবেষকদের মতে, নিপাহ টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের মাধ্যমে ঘাতক ভাইরাসটির হাত থেকে মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতের চেষ্টা এক ধাপ এগিয়েছে। নিপাহ ভাইরাসে আছে মহামারি আকারে রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা।
অ্যাংলো-সুইডিশ বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট করোনাভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, সেই একই প্রযুক্তি নিপাহ ভাইরাসের টিকা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের পাশাপাশি এ পরীক্ষায় নেতৃত্ব দিচ্ছে সংক্রামক রোগের টিকা উন্নয়নে সহায়ক বৈশ্বিক জোট সিইপিআই।
এর আগে ২০২২ সালে মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের সঙ্গে জোট বেঁধে নিপাহ ভাইরাসের টিকার প্রাথমিক ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মডার্না।
গত সেপ্টেম্বরে পাঁচ বছরের মধ্যে চতুর্থবার নিপাহ সংক্রমণের সাক্ষী হয় ভারতের কেরালা রাজ্য। আক্রান্ত ছয়জনের মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়। জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ মস্তিষ্কে প্রদাহ নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম উপসর্গ।