কৃষি
0

মুহুরি সেচ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলেও সুফল পাচ্ছেন না কৃষক

ফেনীতে ৫৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে মুহুরি সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও সুফল পাচ্ছেন না কৃষক। প্রকল্পের আওতায় ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে জমিতে দেয়া হয় সেচের পানি। আর প্রি-পেইড মিটার ব্যবস্থায় মূল্য পরিশোধ করতে হয় কৃষকদের। তাদের অভিযোগ, আগের চেয়ে এই পদ্ধতিতে বেড়েছে খরচ। যদিও এ বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

আগস্টের বন্যায় ফসলের এই মাঠে বুক পরিমাণ পানি থাকলেও এখন শুকিয়ে চৌচির। পানির অভাবে কৃষক আবাদ করতে পারছে না ধান-ফসল। কৃষকের এমন দুরবস্থা নিরসনে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫৬২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অর্থায়নে গেল সরকার বাস্তবায়ন করেছিলেন মুহুরী সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প। কথা ছিল বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থায় ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে খাল থেকে জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করা হবে। কৃষক কম দামে পাবেন তা। কিন্তু মাঠে গিয়ে দেখা যায় উল্টো চিত্র। অবকাঠামোর অস্তিত্ব ঠিক থাকলেও পানি সরবরাহের অধিকাংশ স্কিমই অকেজো। কোথাও নেই বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার কোথাও নেই আবার মিটার।

স্থানীয় একজন কৃষক বলেন, 'কারেন্ট নেই, এই নেই, সেই নেই, মোটর নষ্ট হয়ে গেছে, নানারকম কথা বলে সব বন্ধ করে রাখছে।'

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন এ প্রকল্পটিতে চলেছে লুটপাট। পুকুর নয়, সাগরচুরি হয়েছে। কৃষকের স্বার্থের কথা বললেও হয়েছে উল্টোটা। কৃষক তেলের পাম্পে পানি তুলে সে দিলে যে খরচ এই প্রি-পেইড মিটার ব্যবস্থায় খরচ ধরা হয়েছে তার চেয়ে বেশি।

একজন কৃষক বলেন, 'এক হাজার টাকা দিয়ে যে পানিটা পাই আগে আমরা এর চেয়ে ডাবল পানি পেতাম এই টাকায়। তো আমাদের এত হাজার কোটি টাকা খরচ করে সরকার আমাদের দিলো, এটা আমাদের কোনো কাজেই আসছে না। কোনো প্রয়োজনেই আসছে না।

পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশন বলছে কৃষক অদ্যাবধি এই প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না। ৮০০ এর অধিক পাম্পের বেশির ভাগ অকেজো। কর্তৃপক্ষ কাজ না করে বন্যার অজুহাত সামনে এনেছেন। অপরদিকে কৃষি কর্মকর্তারা বলছে দ্রুত সেচ ব্যবস্থা সচল করতে না পারলে প্রভাব পড়বে আবাদে।

মুহুরি সেচ প্রকল্প পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন কামরান বলেন, '২০০ থেকে ২৫০ পাম্প হয়েছে কি না, যা হয়েছে এখনও পর্যন্ত সবগুলো সচল না। মোটামুটি এর থেকে কোনো বেনিফিট পাচ্ছে না কৃষক।'

ফেনী কালিদহের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু তৈয়ব বলেন, 'সবগুলো এরিয়াতে বীজ বিতরণ করেছি। কৃষক আগ্রহী বীজ বিতরণের জন্য যথাসময়ে সেচের ব্যবস্থা হচ্ছে না বিষয়টায় অনেক ব্যাঘাত ঘটে গেছে।'

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে চলতি বছরের আগস্টসহ কয়েক দফার বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে প্রকল্পটি। পুনরায় স্কিমগুলো মেরামত করে সেচের আওতায় আনার জন্য কাজ চলমান।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, 'মাঠ পর্যায়ে আমাদের মেরামত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে আমরা প্রায় ৬১টি স্কিম সচল করতে সক্ষম হয়েছি। আরও প্রায় ২৫০টি স্কিম আমাদের চলমান রয়েছে। আমরা খুব দ্রুত আমাদের কার্যক্রম শেষ করার চেষ্টা করছি।'

২০১৫-১৬ অর্থবছরে ফেনীতে মুহুরি সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মাঝে করোনার কারণে বছর দু-এক কাজ বন্ধ থাকে। ২০২৪ এর জুনে কাজ শেষ হয়। ৫৩৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের ৫৩৪টি স্কিমের মধ্যে চালু আছে মাত্র ১৩০টি। যেগুলো চালু হয়েছে সেগুলোর সিংহভাগই অকার্যকর।

ফেনীর পাঁচটি উপজেলা ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু নেই তার ধারেকাছেও। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাকুল্যে তিন হাজার হেক্টরও আসেনি সেচের আওতায়।

এসএস