৭ লাখ টাকা খরচ করে লাগানো হয়েছে ঘাস; দুই ম্যাচ পরই করতে হচ্ছে পরিবর্তন

বিভিন্ন জাতের ঘাসের মিশ্রণে খেলার অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে মাঠ
বিভিন্ন জাতের ঘাসের মিশ্রণে খেলার অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে মাঠ | ছবি: এখন টিভি
0

মাত্র দুই ম্যাচ আয়োজনের পরই পরিবর্তন করতে হচ্ছে জাতীয় স্টেডিয়ামের ঘাস। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ আয়োজনের জন্য তাড়াহুড়ো করে ৭ লাখ টাকা খরচ করে ঘাস লাগানো হলেও, সেটি টেকসই হয়নি। একইসঙ্গে বিভিন্ন জাতের ঘাসের মিশ্রণে এটি খেলার অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। যাতে ফুটবলারদের চোটে পড়ার শঙ্কাও থাকে। নতুন ঘাস লাগাতে শিগগিরই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাইবে বাফুফে। তবে অর্থ ব্যয়ে কোন নয়-ছয় হয়েছে কি না, সেটি তদন্ত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে এনএসসি।

জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শুরু হয় চার বছর আগে ২০২১ সালে। এরপর দেশের ফুটবলের প্রধান ভেন্যুকে আধুনিক মানের করতে দফায় দফায় বাড়ে বাজেট। বিশেষ করে স্টেডিয়ামের মূল আকর্ষণ ফুটবল মাঠে সজীবতা ফেরাতে বিশাল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি নেয়া হয় অনেক পরিকল্পনা। তবে সবই যেন শুভঙ্করের ফাঁকি।

ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়াম ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে যে স্বপ্ন বুনেছিলেন ফুটবলাররা সবই যেন থমকে গেছে বাফুফের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অপেশাদার আচরণে। মাঠের ঘাস লাগাতে ৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে ঠিকই তবে আন্তর্জাতিক মানের খেলা উপযোগী হয়নি মাঠটি। জাতীয় স্টেডিয়ামের ঘাস দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে কতটা মানানসই, এমন প্রশ্নও উঠেছে।

মাঠকর্মী জানান, আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে প্রযোজ্য এমন ঘাস লাগাতে হবে। কেউ বলে বারমুডা, কেউ বলে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আর আমাদের দেশিয় ভাষায় আমরা বলি দুবলা। যে মাটিতে বালু থাকে সেখানে ঘাস লাগালে বালু সরে গেলে ঘাসের গোড়াও সরে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের যেই মাটি যেটাকে বলা হয় দোআঁশ মাটি, এই মাটি সরে যায় না। গাছের গোড়াকে ধরে রাখে। এখন যেহেতু ড্রেইনিং পদ্ধতি ভালো হয়েছে, ওয়াটার পদ্ধতি ভালো হয়েছে তাই এসব জিনিস মাথায় রেখেই ঘাস লাগাতে হবে।

ফুটবল পিচে এক ধরনের ঘাস রোপণ করার কথা থাকলেও, জাতীয় স্টেডিয়ামে বিভিন্ন জাতের ঘাস আর আগাছার মিশ্রণে মাঠটি হয়ে পড়েছে ফুটবলারদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যেখানে খেলতে নেমে চোটে পড়ে ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।

সাবেক ফুটবলার শেখ আসলাম বলেন, ‘ঘাস একইরকম হতে হবে। আমি অনেক জায়গায় খেলেছি, সব জায়গায় মাঠে একইরকম ঘাস থাকে। সেই জায়গায় আসতে আমাদের একটু সময় লাগবে। কিন্তু এখনও সময় আছে অনেক। যদি কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে তাহলে সেটা রিকোভার করা সম্ভব। কিন্তু এটার সদিচ্ছা থাকতে হবে যে কত জলদি এটা করা যায়। যত জলদি করা সম্ভব আমাদের জন্য ততই ভালো।’ 

এসব কারণে টনক নড়েছে বাফুফের। মাত্র দুই ম্যাচ পরই ঘাস পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কয়দিনের ব্যবধানেই ঘাস পরিবর্তনে যে অর্থ ব্যয়, এর দায় কি এড়াতে পারে বাফুফে?

কম্পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম গাউস বলেন, ‘দায় নিচ্ছি এখন কি করা যাবে। আমাদেরই করতে হবে। গাইডলাইন দিচ্ছি আমি কয়দিনের মধ্যে। দু’একদিনের মধ্যে টেন্ডার কল করব। সেটা দেশ এবং দেশের বাইরে হবে। খরচ বাবদ অর্থের জন্য এনএসসিকে আমরা চিঠি দিব, তারা সম্মত না হলে আমরাই খরচ করব।’ 

পুরো স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তদারকি করলেও মাঠে ঘাস রোপণের কাজটা করেছে স্বয়ং বাফুফে। যে কারণে ঘাসের দায়টাও তাদের ওপরই বর্তায়। তবে বাফুফের আবারও অর্থ বরাদ্দ চাওয়ার বিপরীতে কড়া হুঁশিয়ারি জানিয়েছে এনএসসি।

প্রকল্প পরিচালক আজমল হক বলেন, ‘এটার সুযোগ আসলে খুব কম। আমরা মাঠ রেডি করে দিয়েছি, হস্তান্তর করবো। যদি লাগে তারা ডেমোনাইজ করবে। প্রজেক্ট শেষ হলে একটি তদন্ত কমিটি হয়। তিন মাসের মধ্যে তারা মাঠে আসে, তারা চেক করে তারা যেই বাজেট দিয়েছিল সেই অনুযায়ী কাজ হয়েছে কি না। প্রতিটা পয়েন্টে তারা যায়, দেখে। তারপর তারা একটি রিপোর্ট দেয়। এই রিপোর্টটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বাফুফের ঘাস পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে এই স্টেডিয়াম থেকে আবারও নির্বাসিত হচ্ছে ফুটবল।

ইএ