অর্থনীতি , আমদানি-রপ্তানি
বিশেষ প্রতিবেদন
0

চাহিদা বেড়েছে তৈরি পোশাকের, নভেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৬.৫%

রেকর্ড রপ্তানি আয়ের প্রত্যাশা

বড়দিন, নতুন বছর, শীত মৌসুম ঘিরে বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের। ইপিবির সবশেষ তথ্য বলছে, গেল বছরের তুলনায় এই নভেম্বর পর্যন্ত পোশাক রপ্তানির সার্বিক প্রবৃদ্ধি সাড়ে ছয় শতাংশ। শুধু নভেম্বরেই প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশের বেশি। আগামীতে রেকর্ড রপ্তানি আয়ের প্রত্যাশা রপ্তানিকারকদের। অস্থিরতার মাঝেও রপ্তানি আয়ের এ প্রবৃদ্ধি দেশের জন্য ইতিবাচক বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

দীর্ঘদিন ধরে দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাতের নেতৃত্বে তৈরি পোশাক। ক্রেতাদের নানা শর্ত আর বিধিনিষেধ যেখানে সর্বদা ছায়ার মতো, সেই তৈরি পোশাক খাতে যেন পান থেকে চুন খসলেই উদ্বেগ বাড়ে ততো।

দেশ যখনই উত্তাল হয়, তখনই কমে তৈরি পোশাক রপ্তানি। তবে ভিন্নতা দেখা গেছে জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়। এসময় কমেনি বরং বেড়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানি। তবে বড়দিন ও নতুন বছরে কী পরিমাণ পোশাক রপ্তানি হয়েছে সে তথ্য না পাওয়া গেলেও সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

ইপিবি বলছে, গেল বছরের তুলনায় চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত পোশাক রপ্তানির সার্বিক প্রবৃদ্ধি প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ । অঙ্কে যা ২০৩ কোটি ডলারের বেশি। আর অর্থবছরের হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ শতাংশের বেশি । আর মাসের হিসাবে গেল বছরের তুলনায় ২০২৪ সালের প্রতি মাসেই বেড়েছে পোশাক রপ্তানি।

রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিল্পাঞ্চলে একের পর এক শ্রমিক বিক্ষোভ, এই খাতে উৎপাদন কমার মাঝেও রপ্তানি আয়ের এমন নজির কমই দেখা গেছে। তবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, 'যে বায়াররা আমাদের এখানে বছরের পর বছর কাজ করছে, চাইলেই রাতারাতি তারা অন্য কোথায় চলে যায় না এবং যেতে পারে না। কিন্তু রিপিটেডলি তারা আমাদের সতর্ক করেছে যে এই ধরনের যদি আনরুলি সিচুয়েশন বজায় থাকে তাহলে অন্য জায়গায় খুঁজবে।'

বিজিএমইএ সহায়ক কমিটির সদস্য মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী বলেন, 'বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে এবং নির্বাচন পূর্ববর্তী কোনো সহিংসতা আবার হয় কি না এবং এখানে অর্ডার প্লেস করার পর আমরা সঠিক সময়ে পণ্যগুলো অর্ডার শিপমেন্ট করতে পারবে কি না, সে ধরনের শঙ্কার মধ্যে বায়াররা আছে।'

মূলত তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ চার থেকে পাঁচ মাস হাতে রেখেই দিয়ে থাকেন ক্রেতারা। সে হিসেবে আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে ভালো ফরমায়েশ পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই ভবিষ্যতের ক্রয়াদেশ নিয়েও আশাবাদী রপ্তানিকারকরা।

তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বেশি ক্রয়াদেশ আসে শীত মৌসুমে। একই সময় খ্রিষ্ট সম্প্রদায়ের বড়দিন আর নতুন বছর ঘিরে, আদেশে বাড়তি মাত্রা যোগ করে। তবে এ বছর ৫ আগস্ট পরবর্তী শ্রমিক অসন্তোষ, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে ক্রয়াদেশ ঠিকঠাক থাকলেও মূলত বেগ পেতে হয়েছিল পণ্য শিপমেন্টে।

রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, 'জুলাই বিপ্লবের সময় আমরা কিছুদিন কাজ করতে পারিনি। কিন্তু পরবর্তীকালে আমরা অতিরিক্ত কাজ করে বা এয়ারে হলেও আমরা শিপমেন্ট করতে পারছি। ক্রিসমাস বা নিউ ইয়ারে নট ন্যাসেসারি যে সবসময় ফ্যাসনের আইটেম বিক্রি হয়। এখানে কিছু বেসিক আইটেমও বিক্রি হয়। সেজন্য বায়ারের সেলফ যদি খালি হয়ে যায় তখন তারা আমাদের অর্ডার দিবে।'

বিজিএমইএ সহায়ক কমিটির সদস্য মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী বলেন, 'গতবছরের আগের বছরের নভেম্বরের সাথে যদি এই বছরের নভেম্বরের তুলনা করা হয় তাহলে সেটা ১০ শতাংশ গ্রোথ। এক বিলিয়ন ডলারের মতো পণ্য আমরা সঠিক সময়ে রপ্তানি করতে পারিনি। এই পণ্যগুলো আমরা পরে ডিসকাউন্ট এবং এয়ারে করে বায়ারদের কাছে পৌঁছাতে বাধ্য হয়েছি।'

দেশে যতবড় রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে ততবড় বাণিজ্যিক সংকট তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। পোশাক উৎপাদনের সক্ষমতায় বাংলাদেশ অন্য দেশের তুলনায় এগিয়ে থাকায় ক্রয়াদেশ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তারা।

অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'কেউ কেউ ভয় পেয়েছে যে, হয়তো আরও সশয় লাগবে ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থা ফিরে আসতে। কিন্তু অসম্ভব ভালোভাবে কিন্তু উন্নত হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো দেশের সঙ্গে আমাদের গার্মেন্টেসের দাম চিন্তা করলে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম দামে আমাদের পণ্য বিক্রি হয়। কারণ যারা রপ্তানিকারক আছে তারা বলছেন যে, তারা দেখেছেন অর্ডারটা বেড়েছে। সামনের মাসগুলোতে আমরা দেখবো তৈরি পোশাকে রপ্তানি আরও বাড়বে।'

রপ্তানি আয়ের এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে ক্রেতাদের আস্থা ফেরানোর পাশাপাশি দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এসএস