ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের তথ্য মতে, বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বছরে ১০.৬ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে ৮.৪ বিলিয়ন রপ্তানি ও ২.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। ফলে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেশ বড়।
২০২৪ সালে বাংলাদেশ মোট ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে, এর মধ্যে ৭.২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় আমেরিকায়, যা একক দেশ হিসেবে পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। সেই বাজারে হঠাৎ বাংলাদেশি পণ্যে ১৫ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণায় হতবাক পোশাক কারখানা মালিকরা। রপ্তানিকারকরা বলছেন, রাজনৈতিক সম্পর্ক ভালো থাকায় যেখানে শুল্ক আরও কমানোর কথা ভাবা হয়েছিল, সেখানে উল্টো বেড়ে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে হতাশা। সবচেয়ে বড় কথা, আগামী কয়েক মাসে আমেরিকায় রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা অন্তত তিন থেকে চার বিলিয়ন ডলারের পোশাক তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন কারখানায়। অনেক রপ্তানি পণ্য আছে শিপমেন্টের অপেক্ষায়। এসব পণ্য বাড়তি শুল্কের আওতায় আসায় তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
বিজিএমইএর সহ সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, 'আমাদের যে অর্ডারগুলো গত তিন থেকে চার মাস ধরে রানিংয়ে আছে, তার কিছু পণ্য আমাদের ফ্যাক্টরিতে আছে, কিছু অন দ্যা ওয়েতে আছে। কিছু আবার আমেরিকান পোর্টেও পড়ে আছে। সেগুলো এখন রিলিজ করতে হলে ৩৭ শতাংশ দিতে হবে। আমার বায়ার যদি কাল বলে আমার বাড়তি ডিউ তোমাকে পেমেন্ট করতে হবে না হলে তামার পণ্য আমি নিবো না। সেক্ষেত্রে কিন্তু পুরোটা ক্ষতি হয়ে ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে।'
রপ্তানিকারকরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে এ ঘোষণা আসলেও, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এটি যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব। আপাতত মার্কিন পণ্যে শুল্ক কামনোর কোনো বিকল্প নেই। তাই যতদ্রুত সম্ভব অন্তবর্তী সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ ব্যবসায়ীদের।
চট্টগ্রাম বিজিএমইএর পরিচালক গাজী মো. শহীদুল্লাহ বলেন, 'এটা আসলে কূটনৈতিক পর্যায়ে তো আছেই কিন্তু প্রথমত হচ্ছে দেশের যারা পলিছি মেকাররা আছেন তাদের সাথে সরকারের দ্রুত বসা উচিত। বসে কীভাবে এটা কী করা যায়, এটার পজেটিভ, নেগেটিভ পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করে আমার মনে হয় এটা নিয়ে স্টেপ নেয়া উচিত। কারণ এটা যতদ্রুত করবো এটা আমাদের জন্য ততোই বেনিফিট।'
বিজিএমইএ নেতারা বলছেন প্রতিযোগী দেশ ভারত, চীন ও পাকিস্তানে আরোপিত শুল্ক বাংলাদেশের চাইতে কম থাকায় বাজার হারাবে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় সরকার, বিদেশি দূতাবাস ও নীতি নির্ধারকরা মিলে একটি সেল গঠন ও ভবিষতের জন্য শক্তিশালী বিকল্প বাজার তৈরির তাগিদ দেন তারা।
বিজিএমইএর সাবেক সহ সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'যেখানে ট্যাক্স কম সেখানেই স্বাভাবিকভাবে একটা বায়ার যাবে। তো উচ্চ ট্যাক্সে আমার এখানে আসার কোনো কারণ নেই। কারণ আমসার এখানে আসলেও যে অফার নিয়ে আসবে, সেটি তো আমি কোনোভাবেই অ্যাফোর্ট করতে পারবো না। আমেরিকার সাথে তো ডিপ্লোমেসি নিয়ে কাজ করবেই, এটা কীভাবে রিভিউ করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করবে। এটলিস্ট আগের অবস্থানে কীভাবে আনা যায় সেটা নিয়ে কাজ করবে একইসাথে আমেরিকার একটা বিকল্প বাজার তৈরি করতে হবে।'
বাংলাদেশে রপ্তানি পোশাকের ৫০ শতাংশের গন্তব্য ইউরোপের দেশগুলো। আমেরিকায় যায় ১৭ শতাংশ। ট্রাম্প সরকারের এমন সিদ্ধান্তে পরিবর্তন না আসলে চার থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হুমকির মুখে পড়বে বলে শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।