বিচার ও সংস্কারের দৃশ্যমান অগ্রগতির পর প্রার্থী চূড়ান্তের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মূল ব্যস্ততা নির্বাচনি জোট নিয়ে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলকে জোটে পেলে বিজয় নিশ্চিত হবে সেই অঙ্ক কষছে বড় রাজনৈতিক দলগুলো।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতকে কেন্দ্র করে দুই শিবিরে বিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপির জোটে যেতে পারে যুগপৎ আন্দোলনে শরীক গণতন্ত্র মঞ্চের কয়েকটি দল। অন্যদিকে ইসলামী ছয়টিসহ আটটি দল জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছে কয়েকমাস ধরে। বাইরে রইলো এনসিপি, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি কোনো জোটে যাচ্ছে তা নিয়েই চলছে নানা সমীকরণ।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এখন টিভিকে জানিয়েছেন, স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে না এনসিপি। বিএনপি জামায়াত দুটি দলকেই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দুটি দলেরই সমালোচনা করে বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে সংস্কারের পক্ষে এবং উদার গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী তাদেরকেই বেছে নেবে এনসিপি।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘জামায়াত ইসলামীর লেবার, উইমেন যে ইস্যুগুলো আছে, রাজাকার বা ট্যাগিং রাজনীতি এগুলোর আমরা বিরুদ্ধে। আমরা প্রো-ইসলামের পক্ষে। এখানে ইসলামিক অনেক শক্তি রয়েছে, তাদের কিভাবে একীভূত করা যায় সে কাজ করবো। তাদের বিভাজিত না করে একটি গণতান্ত্রিক পথে হাটতে পারি। তারপর আসি বিএনপি, বিএনপি একটি ডেমোক্রেটিক পার্টি। তবে গত একবছর বা প্রিভিয়াস এক্সপেরিয়ান্স করাপশন, দূর্নীতি, চাঁদাবাজে বিএনপির প্রত্যক্ষ মদদ ছিলো। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতি মুক্ত একটি সোসাইটি, প্রো-উইমেন সোসাইটি, প্রো- ইসলাম সোসাইটি, প্রো-লেবার সোসাইটির যাত্রা আমরা করতে যাচ্ছি। এজেন্ডাতে এ বিষয়গুলো নিয়ে যারা আমাদের ক্লোজ আসবে তাদের সঙ্গে অ্যালাইন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
তবে একটি পর্যায়ে গিয়ে বিএনপির বিপক্ষে একটি সর্বদলীয় ঐক্য গড়ে উঠার সম্ভাবনার কথা জানিয়িছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মনজু। জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় যেতে না পারলেও শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে তুলতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা হয়েছে তখন এনসিপি, জামায়াতসহ অন্যান্য দল আমরা যারা আছি সংস্কার প্রশ্নে আমাদের কণ্ঠ একইরকম ছিলো। ঐকমত্য কমিশনের মনে হয়েছে বিএনপির অ্যালাইন যারা তারা একপক্ষে বিএনপির অপজিট যারা তারা একপক্ষে। জামায়াত অস্বাভাবিক ভালো করবে মনে করি না। তবে কিছুটা ভালো করবে। আবার জামায়াত যদি এখানে বিগার অ্যালায়েন্স তৈরি করে, ইনক্লুসিভ আইডিয়া যদি নিতে পারে যা ডাকসু নির্বাচনে নিয়েছে সেক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতেও পারে। এখানে ম্যাজিক হিসেবে কাজ করবে বিএনপির কোন দল।’
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে শরীক থাকলেও জোটের সমীকরণ স্পষ্ট করেনি গণসংহতি আন্দোলন। এ দলের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি মনে করেন, এবারের নির্বাচনে দল ও মার্কার পাশাপাশি সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে যোগ্য প্রার্থী।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘একটি কথা বলা যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। মার্কার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিও গুরুত্ব পাবে। একটি মুক্তিকামী গণতন্ত্রকে সামনে রেখে আমরা আমাদের লড়াইটিকে এগিয়ে নিতে চাই। সেই লড়াইটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত যে রাজনৈতিক অবস্থা, সামাজিক ব্যবস্থা সামনে আনবেন তাদের সঙ্গেই আমাদের ঐক্যর প্রশ্নটি সামনে আসবে।’
দীর্ঘদিন ধরে যুগপৎ আন্দোলনে শরীক হয়েও গণতন্ত্র মঞ্চের কোন কোন দলের বিএনপি জোট থেকে যেমনি ছিটকে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। একইভাবে ইসলামী দলগুলো জামায়াতের সঙ্গে একই মঞ্চে আন্দোলন করে এলেও কারো কারো এই জোট থেকে বেরিয়ে যাবার ঝুঁকি রয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে এনসিপি কোন জোটে যাবে তার ওপর নির্ভর করছে আসন্ন নির্বাচনে জয় পরাজয়ের সমীকরণ।





