স্বপ্নযাত্রার প্রস্তুতি চলছে। আর ক'দিন পরেই ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরবে মানুষ।
সে যাত্রাকে পরিপূর্ণ করতে দম ফেলবার ফুরসত নেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের। ওয়ার্কশপ ঘুরে দেখা যায়, নতুন রূপে রাস্তায় নামতে তৈরি হচ্ছে নতুন বাস। চলছে মেরামত। রঙিন আবহে সাজছে মহাসড়কের যাত্রীবাহী গাড়ি। নতুন বাসের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন সিট।
বাস মেরামত শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘আমরা পুরাতন বাসগুলোকে রং ও মেরামত করে ডেলিভারি দেই। এছাড়া নতুন বাসও থাকে।’
আরেকজন বলেন, ‘নতুন কাজ একটু কম হয়। পুরাতন বাসের কাজই এখানে বেশি হয়।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, এবার ঈদে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর থেকে গ্রামে ফেরা মানুষের প্রায় ৭৫ শতাংশই ফিরবেন সড়কপথে। এতে বেড়ে যায় গণপরিবহনের চাহিদা। তবে নতুন গাড়ি তৈরি বা পুরোনো গাড়ি মেরামত হলেও ঈদে চাহিদার তুলনায় গণপরিবহন সংকট যেন নতুন নয়।
আর এই সংকটকে পুঁজি করে বেশকিছু সুযোগসন্ধানী ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন করে। পথে পথে সৃষ্টি হয় দুর্ভোগ, যানজট। ঘটে দুর্ঘটনাও। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, গেল বছর ঈদে প্রায় ৩৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৩৬৭ জন। আহত হয়েছে অন্তত দেড় হাজার মানুষ। যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩৯.২০ শতাংশ বেশি।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, মহাসড়কে স্বস্তি ফেরাতে নিতে হবে সমন্বিত পদক্ষেপ।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, কর্তৃপক্ষ আছে। তাদের দেখা উচিত মহাসড়কে কী ধরনের গাড়ি নামছে। শুধু রং করে ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামানো হচ্ছে কিনা।
স্বস্তিদায়ক যাত্রায় মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সমন্বিত উদ্যোগে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস এই খাতের মানুষদের।
ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির এম এ বাতেন বলেন, ‘সভাপতি সিটি সার্ভিসের প্রতিটা গাড়ির কোম্পানিকে নিয়ে মিটিং করেছি যেন এই সব গাড়ি লং রুটে না চলে। সাধারণত এইসব গাড়ি চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে হালকা যানবাহন চালানোর। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো কোনো অবস্থাতেই সিটি সার্ভিসের গাড়ি লং রুটে না চলতে পারে।’
ঈদে বাড়ি ফিরতে প্রতিবছরই যাত্রীদের গুণতে হয় বাড়তি ভাড়া। সাথে দৌরাত্ম্য বাড়ে টিকিট কালোবাজারি ও ফিটনেসবিহীন গণপরিবহনের। তবে এ বছর এসব বন্ধের উদ্যোগের কথা বলছেন পরিবহন নেতারা।
শ্রমিক দলের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, বাড়তি ভাড়া, মলম পার্টি, ছিনতাই এইগুলোর সাথে ব্যক্তি বিশেষ জড়িত থাকে। কোনো ব্যক্তির অন্যায়কে মারা গোটা কমিউনিটির বদনাম হতে দিবো না।
ঈদযাত্রায় মহাসড়কে লোকাল বাস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সব ধরনের শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা নিতে হবে হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তবেই আনন্দযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হবে।