দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনা আর হিসাব-নিকাশের অবসান ঘটিয়ে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনেই স্পষ্ট হয়ে গেছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত চিত্র। রাজনৈতিক দলগুলো এখন প্রধানত দুটি শক্তিশালী মেরুতে বিভক্ত। একদিকে দীর্ঘদিনের মাঠের আন্দোলনের সঙ্গী বিএনপি জোট, অন্যদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন শক্তিতে বলীয়ান জামায়াত জোট। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে এবারের নির্বাচন কার্যত এই দুই বৃহৎ জোটের শক্তি পরীক্ষার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন:
একনজরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সময়সূচি (Timeline)
- মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময়: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ (আজ), বিকেল ৫টা।
- মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ৪ জানুয়ারি ২০২৬।
- প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন: ২০ জানুয়ারি ২০২৬।
- প্রতীক বরাদ্দ: ২১ জানুয়ারি ২০২৬।
- আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু: ২২ জানুয়ারি ২০২৬।
- ভোটগ্রহণের তারিখ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬।
- মোট সংগৃহীত মনোনয়নপত্র: ৩,১৪৪টি।
- জমা পড়া মনোনয়নপত্র: ১৬৬টি (সকাল পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী)।
- নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা: ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি।
- বিএনপি জোট: আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলমান। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ২০ জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত আলটিমেটাম।
- জামায়াত জোট: এনসিপি (NCP) ও অলি আহমদের এলডিপি (LDP) নতুন করে যুক্ত হওয়ায় আসন ভাগাভাগিতে নতুন চ্যালেঞ্জ।
- এনসিপি (NCP) সংকট: জামায়াতের সাথে জোটের প্রতিবাদে তাসনিম জারা, তাজনূভা জাবীন ও মীর আরশাদুল হকসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পদত্যাগ।
- দলবদল: বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং পরিচিত রাজনীতিবিদদের নাটকীয়ভাবে জামায়াতে যোগদান (যেমন: মেজর অব. আক্তারুজ্জামান)।
- আওয়ামী লীগ: দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না; তবে স্বতন্ত্র বা অন্য দলের হয়ে প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবেন।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: নাটকীয় দলবদল ও নতুন জোটের সমীকরণ
আসন্ন ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বইছে নাটকীয় পরিবর্তনের হাওয়া। যে দলবদলকে অনেকে ‘ভূতুড়ে কাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করছেন, তা এখন প্রতিদিনের চিত্র। সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে পরিচিত অনেক রাজনীতিবিদের হঠাৎ আদর্শ পরিবর্তন এবং জোটবদ্ধ হওয়ার নতুন সমীকরণ।
আদর্শের লড়াই বনাম ভোটের রাজনীতি
নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই নিজের পুরনো দল ছেড়ে বড় দলে যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা হলো, বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ‘ফুল হাতে’ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির দাবিদার অনেক নেতার এই ভোলবদল রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাবিয়ে তুলছে।
জামায়াত-এনসিপি জোট ও নতুন মোর্চা
সর্বশেষ রাজনৈতিক বড় খবর হলো—জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জামায়াতে ইসলামীর সাথে আসন সমঝোতা ও জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার পথে রয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এনসিপির ভেতরেই চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। জামায়াতের সাথে জোটের প্রতিবাদে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা ও জনপ্রিয় মুখ (যেমন: তাসনিম জারা) দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
ভোটের ময়দানে তিন পক্ষ
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত থাকায় এবারের নির্বাচন অনেকাংশেই ‘একপক্ষীয়’ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই শূন্যতা পূরণে এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। বর্তমানে ভোটের মাঠ তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত:
- প্রথম পক্ষ: বিএনপি ও তাদের সমমনা যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলসমূহ।
- দ্বিতীয় পক্ষ: জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সাথে থাকা এনসিপি ও সমমনা ইসলামপন্থী দলগুলো।
- তৃতীয় পক্ষ: জাতীয় পার্টির দুই অংশ, বাম-প্রগতিশীল জোট এবং সুন্নী-মাজারপন্থী বিভিন্ন ছোট দল।
বিএনপি ও মিত্র ০৯টি দল (BNP and 10 Partner Parties)
বিএনপির নেতৃত্বাধীন বা তাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া দলগুলোর তালিকায় রয়েছে:
- বিএনপি (Bangladesh Nationalist Party - BNP)
- নাগরিক ঐক্য (Nagorik Oikya)
- গণসংহতি আন্দোলন (Gonosamhati Andolan)
- গণঅধিকার পরিষদ (Gono Odhikar Parishad)
- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (Biplobi Workers Party)
- বিজেপি (Bangladesh Jatiya Party - BJP)
- এনপিপি (National People's Party - NPP)
- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (Jamiat Ulema-e-Islam Bangladesh)
- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (একাংশ) (Jamiat Ulema-e-Islam - Fraction)
আরও পড়ুন:
জামায়াতে ইসলামী ও মিত্র ১০টি দল (Jamaat-e-Islami and 10 Partner Parties)
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর সাথে বা তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে আরও বেশ কিছু ইসলামপন্থী ও সমমনা দল:
- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (Bangladesh Jamaat-e-Islami)
- এনসিপি (National Congress Party - NCP)
- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (Islami Andolan Bangladesh)
- খেলাফত মজলিস (Khelafat Majlish)
- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (Bangladesh Khelafat Majlish)
- বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (Bangladesh Khelafat Andolan)
- জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (National Democratic Party - JagoPa)
- বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি (Bangladesh Nezame Islam Party)
- বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (Bangladesh Development Party - BDP)
- এলডিপি (Liberal Democratic Party - LDP)
আরও পড়ুন:
ভোটের মাঠে চূড়ান্ত লড়াই: বিএনপি বনাম জামায়াত জোটের নতুন সমীকরণ
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র এখন প্রধানত দুই মেরুতে বিভক্ত। দীর্ঘদিনের মিত্রতা ভেঙে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এখন নির্বাচনের ময়দানে একে অপরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে এবারের লড়াই হবে মূলত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৯ দলীয় জোট (BNP-led 09 party alliance) এবং জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটের (Jamaat-led 10 party alliance) মধ্যে।
বিএনপি ও মিত্র দল জামায়াতে ইসলামি ও মিত্র দল বিএনপি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি নাগরিক ঐক্য এনসিপি গণসংহতি আন্দোলন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ খেলাফত মজলিস বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বিজেপি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এনপিপি জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (একাংশ) বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি --- এলডিপি
আরও পড়ুন:
বিএনপি ও জামায়াত জোটে আসন ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময়সীমা আজ (সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় শেষ হচ্ছে। তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন দুই জোটই শরীক দলগুলোর সাথে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে পারেনি। জোটের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর আধিক্যই এর প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএনপি জোটের সংকট ও সাংগঠনিক হুঁশিয়ারি
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট শরীকদের জন্য কিছু আসন আনুষ্ঠানিকভাবে ছেড়ে দিলেও চূড়ান্ত ফয়সালা এখনও হয়নি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’।
- শরীকদের বরাদ্দ দেওয়া আসনগুলোতে বিএনপির স্থানীয় নেতারা স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
- আগামী ২০ জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। এর মধ্যে বিদ্রোহীদের সরে না দাঁড়ালে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।
জামায়াত জোটে নতুন সমীকরণ
আটটি দল নিয়ে গঠিত জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটে ৩০০ আসনেই সমঝোতা প্রায় শেষ ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নতুন দুটি দল জোটে আসায় পরিস্থিতি বদলে গেছে।
- গতকাল (রোববার, ২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি জোটে যোগ দিয়েছে।
- নতুন দুই দলের অন্তর্ভুক্তি পুরো ৩শ আসনের ভাগাভাগিতে নতুন করে আলোচনার চাপ সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন:
মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ: নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ও বড় দুই জোটের সমীকরণ
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ (সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় শেষ হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা। নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, আজই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার চূড়ান্ত সুযোগ। এরপর শুরু হবে যাচাই-বাছাই, আপিল এবং ২০ জানুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের প্রক্রিয়া।
মনোনয়নপত্র জমার পরিসংখ্যান
নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির তথ্যমতে, গতকাল বিকেল পর্যন্ত সারা দেশে মোট ২ হাজার ৭৮০টি মনোনয়নপত্র সংগৃহীত হয়েছে, যার মধ্যে জমা পড়েছে ৩১টি। নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারলেও রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত থাকায় আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে অংশ নিতে পারছে না। তবে দলটির নেতারা অন্য দলে যোগ দিয়ে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
জোটের অভ্যন্তরীণ সংকট
মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়ে এলেও বড় দুই জোট—বিএনপি ও জামায়াত—এখনও চূড়ান্ত আসন সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। শরীকদের আসন ছেড়ে দেওয়া নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিভেদ এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের উপস্থিতি পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। ২০ জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান না হলে নির্বাচনি লড়াইয়ের সমীকরণ বদলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন:





