যুগপৎ কর্মসূচির আহ্বায়ক ছিলেন নাহিদ ইসলাম, একদিনের ভেতর ‘পল্টি’!

ইসলামী আন্দোলন নেতার দাবি

সঞ্চালক, নাহিদ ইসলাম, এস এম সাইফ মোস্তাফিজ, আশরাফ আলী আকন | ছবি: এখন টিভি
0

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও সমমনা দলগুলো বেশ কয়েকমাস ধরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিম্নকক্ষে পিআর চেয়ে যে আন্দোলন করে আসছে, সেসব কর্মসূচির আহ্বায়ক ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতা নাহিদ ইসলাম— এমনটাই দাবি করেছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন। সম্প্রতি এখন টিভির নিয়মিত আয়োজন ‘ভোটের ট্রেন’-এ অংশ নিয়ে তিনি এও দাবি করেন, নাহিদ ইসলাম কর্মসূচি বাস্তবায়নের আহ্বায়ক হয়েও একদিনের ভেতর ‘পল্টি’ নেন। তবে, তার এ দাবিকে ‘ভুল’ বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান অনুষ্ঠানে উপস্থিত এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সাইফ মোস্তাফিজ।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘নাহিদ ইসলাম ছিলেন আমাদের কর্মসূচি (পাঁচ দফা) বাস্তবায়নের আহ্বায়ক। জামায়াত ও আমরা সবাই তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছি। একদিনের মধ্যেই সে এটা পল্টি মারলো। একদিন পরই সে পল্টি মারলো, আমাদের এটা একটু ভাবিয়ে তুললো যে ঘটনা কী। উনি হলেন আহ্বায়ক, আর উনি বললেন যে, ‘‘এটা চাই না’।’

সমমনা দলগুলোর পাঁচ দফা দাবি ছিল—গণভোটের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে গণভোট দেয়া; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

নাহিদ ইসলাম কেন এমন করলেন—সঞ্চালকের এমন প্রশ্নে আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘তা আমরা বলতে পারছি না যে, কেন এটা করলো। উনি একটা কথা বলে যে, নিম্নকক্ষে পিআর চায় না। নিম্নকক্ষে পিআর চায় না, উচ্চকক্ষে চায়। এ দেশের মানুষ উচ্চকক্ষ বোঝে? কোনোদিন উচ্চকক্ষ ছিল? বলেন। এটা একটা আজগুবি। উচ্চকক্ষ তো প্রয়োজন হয় না। ছোট একটা দেশ, একটা ইউনিটারি দেশ। আমার কোনো প্রদেশ নেই, একটি অঙ্গরাজ্যও নাই। এখানে তো উচ্চকক্ষ প্রয়োজন হয় না। এমনিতেই ৩০০ প্রার্থীর মধ্যে ২৯০ থেকে ২৯৫ জন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।’

আরও পড়ুন:

কেনই সরে গেলেন—ইসলামী আন্দোলনের এই নেতাকে ফের প্রশ্ন করলেও তিনি অনেক ‘ধোঁয়াশা’ রেখে জবাব দেন। বলেন, ‘সরে গেছে কি না, তাদের সঙ্গে কথা হয়নি। কিন্তু যে বৈঠকে কথা হয়েছিল, আমরা পাঁচ দফা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবো; সে বৈঠকে উনি ছিলেন আহ্বায়ক। নাহিদ আহ্বায়ক ছিলেন। সবাই তাকে এ দায়িত্বটা দিয়েছিল। পরেরদিন কর্মসূচির ব্যাপারে সে বললো, ‘‘আমি এ জোটের সঙ্গে নেই’’। আছে বা নেই, এটা নিয়ে আমাদের এত টেনশন নেই।’

চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেখা গেছে, ‘জুলাইয়ের সমমনা শক্তিরা’ ঐকমত্য কমিশনে জোরালো বক্তব্য রেখে আসছেন। সেখানে তারা জুলাইয়ের চেতনা বা স্পিরিট বাস্তবায়নের বিষয়েও বেশ বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। এরমধ্যে নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক দল এনসিপিকেও জুলাইয়ের অন্যতম শক্তি বলা হয়, যদিও তারা দল গঠন করেছেন গণঅভ্যুত্থানের পর। সেই এনসিপি তথা নাহিদ ইসলাম যদি কর্মসূচি থেকে সরে যান, তাহলে পিআর চাওয়া সমমনা দলগুলোর রাজনৈতিক ন্যারেটিভ কী হবে—এমনটাই প্রশ্ন রাখা হয় আশরাফ আলী আকনের দিকে।

উত্তরে আকন বলেন, ‘এখনও একটা পয়েন্টে এনসিপির সঙ্গে আমাদের একটি মিল আছে। তারা আলাদাভাবে গণভোট চায়, আলাদা তারিখে। বিএনপি আর কিছু দল যেমন একই তারিখে চায়। আমরা সাত দল আলাদা তারিখে চাই। আমরা চাই, আলাদা তারিখে এ গণভোটটা হবে। আলাদা গণভোটের তারিখে কিন্তু এনসিপি এক আছে।’

আরও পড়ুন:

অনুষ্ঠানে আকনের সঙ্গে এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সাইফ মোস্তাফিজ। তিনি আকনের বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে ‘পল্টি’ শব্দের আপত্তি জানান। এসময় নিম্নকক্ষে পিআর না চাওয়াকে তিনি দলের পক্ষে যৌক্তিক কারণ মনে করছেন।

এস এম সাইফ মোস্তাফিজ বলেন, ‘উপস্থিত আকন ভাই যে কথা বললেন, যে শব্দচয়ন আমার আপত্তি লেগেছে যে, পল্টি মেরেছে। প্রথমত পিআরের যে প্রসঙ্গ, এটা ডে-ওয়ান থেকে আমরা বলে আসছি, আমরা উচ্চকক্ষে পিআরে কথা বলছি। হতে পারে এরকম না, আমরা কিন্তু কঠোর যে, আমরা চাই, উচ্চকক্ষে পিআর হোক। আমার জানামতে, আমাদের ঐকমত্য কমিশনে যে টিমে আছে এবং আমাদের দলীয় ফোরামেও কখনও নিম্মকক্ষে পিআরের ব্যাপারে আলাপ হয়নি। ভবিষ্যতে এটা হতে পারে, কিন্তু বর্তমান যে প্রেক্ষাপট, বর্তমানে যে নির্বাচনটি আসবে; সেখানে আসলে এখন নিম্নকক্ষে পিআরের বাস্তবতা নেই।’

বেশ কয়েকমাস ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এনসিপির নেতা-কর্মীরা বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। আবার কদিন ধরে গুঞ্জন উঠেছে, এনসিপি-বিএনপি জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যদি জোটেই নির্বাচন করে এনসিপি, তাহলে দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা কতটা ছিল; এমনকি রাজনৈতিক ‘দোষারোপ’ কেন বারবার সামনে এসেছিল—দলটির যুগ্ম সদস্যসচিবকে প্রশ্ন করা হয়।

আরও পড়ুন:

সাইফ মোস্তাফিজ বলেন, ‘দেখুন, আমি প্রথমেই ক্লিয়ার করেছি, আমাদের জায়গা থেকে আমরা নিম্নকক্ষে পিআরের কথা বলিনি। মাঠের যে আন্দোলনের কথা আসছে, তখন হচ্ছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে রূপরেখাটা আমরা চাচ্ছিলাম, ঐকমত্য কমিশনের মিটিংটা কিন্তু শেষের সময়টা ছিল। সে জায়গা থেকে আমাদের তখন সিদ্ধান্তের জায়গা ছিল, যদি এটা বাস্তবায়নের রূপরেখা না দেয়, সেক্ষেত্রে আমরা দাবি আদায়ের জন্য মাঠে নামবো। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন যখন তাদের সময় বাড়িয়েছে, তখন আমরা এটিকে সম্মান জানিয়ে কিন্তু টেবিলে বসছি। এখানে উনাদের সঙ্গে আমাদের যে বিরোধের একটা জায়গা আছে, তা না। আর বিএনপির সঙ্গে জোটের কথা যেটা বললেন, সেটা হচ্ছে। দেখুন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের জায়গা থেকে নির্বাচনের আগে অনেকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে আমাদের। জামায়াত, বিএনপি বা অন্যান্য যে রাজনৈতিক দল। মূলত রাজনৈতিকভাবে জোটবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোনো জায়গায় এখনও আমরা বলিনি। কিন্তু সমীকরণের জায়গা থেকে, বাংলাদেশের যে স্পিরিটের কথা বলছি; এরকম যদি কেউ থাকে, তাদের সঙ্গে সমঝোতার একটা জায়গা তৈরি হতে পারে। কিন্তু জোটে এখনও এনসিপি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি।’

নিম্নকক্ষে পিআর কেন ‘অযৌক্তিক’, বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘এসময়ে তো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে যে ফরমালিটিজ ফিলাপ করা দরকার, সেটার জন্য পাঁচ-ছয় মাস এনাফ টাইম কি না? নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যে রোলটা প্লে করার কথা, তথ্য হালনাগাদ করার, সবকিছু মিলে আসলে যে আয়োজনটা করার কথা, সেটার জন্য এখন পিআরের সুযোগ নেই। এসময়ের মধ্যে সুযোগ নেই। আমাদের যে সামাজিক প্রেক্ষাপট, সে জায়গা থেকেও এসময় পিআর হওয়া কঠিন।’

এসএস