যশোর সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম ২০১৫ সালে ২ হাজার ব্রয়লার মুরগি নিয়ে গড়ে তোলেন খামার। কিন্তু প্রতিনিয়ত লোকসানের মুখে বন্ধ করতে বাধ্য হন নিজের প্রতিষ্ঠান।
খামারি নুরুল ইসলাম বলেন, 'মুরগির যে দাম তার সাথে আমরা সমন্বয় করতে পারছি না। এর মধ্যে মুরগি উঠালেই লস হয়, সেজন্য আপাতত বন্ধ রাখছি।'
একই অবস্থা যশোর সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামের কামরুজ্জামান কাজলের। ২০১৩ সালে ১ হাজার মুরগির বাচ্চা নিয়ে খামার গড়ে তোলেন। প্রথম দিকে লাভ হলেও করোনার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হন তিনি। এখন ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে বন্ধ রেখেছেন খামারটি।
কামরুজ্জামান কাজল বলেন, 'যখন মুরগি রেডি হয়ে যায় তখন মুরগির দাম পাওয়া যায় না। বাজারে একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে যায় সেজন্য খামার বন্ধ রাখছি এখন।'
শুধু নুরুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান কাজল নয়, যশোর জেলায় গত দু'বছরের ব্যবধানে এক হাজার ৫৭৯টি মুরগির খামার বন্ধ হয়ে গেছে। খামারিরা বলছেন, এই শিল্পের বাজার ব্যবস্থা, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
একজন খামারি বলেন, 'মুরগির বাচ্চার দাম বেশি, খাদ্যের দাম বেশি। সবকিছু মিলে ব্যবসায় লাভ করতে পারছি না, সেজন্য আমার ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। আমাদের মার্কেটিং ব্যবস্থা কোনোকিছু কন্ট্রোলে নেই।'
গত এক বছরের ব্যবধানে মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ। এক বছর আগেও ২ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে যে ফিড পাওয়া যেত, সেই ফিড হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। আগে যেখানে ভুট্টার কেজি ছিল ১৮ টাকা, সেটি এখন ৩৬ টাকা। রাইসপলিস ২৮ টাকার জায়গায় বিক্রি হচ্ছে ৩৩ টাকায়। এছাড়াও বেড়েছে ওষুধ ও অন্যান্য অনুষঙ্গের দামও।
যশোরের পোল্ট্রি ফিড বিক্রেতা সাব্বির আহমেদ বলেন, 'একটা বাচ্চা উৎপাদন করতে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু সে বাচ্চা কিনতে হচ্ছে ৩০, ৪০ বা ৫০ টাকা করে।'
পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পিত ও পর্যাপ্ত সহায়তা না দিলে জেলায় খামার বন্ধ হওয়ার হার আরও বাড়বে।
আফিল গ্রুপের পরিচালক মাহবুব আলম লাভলু বলেন, 'আমাদের দেশে আমিষের প্রচুর প্রয়োজন। এই চাহিদা অব্যাহত রাখার জন্য অবশ্যই ডিম, মুরগি, মাংস সঠিকভাবে উৎপাদন করতে হবে।'
খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান জেলার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক। তিনি বলেন, 'যে সমস্ত খামারি আছেন তাদের বাইরেও নতুন নতুন খামার তৈরি হয়। আবার অনেকে না বুঝেই তৈরি করেন। জ্ঞান অর্জন করে তৈরি করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।'
যশোরে বর্তমানে ১ হাজার ৪শ' টি পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এখানে প্রতিদিন ডিম উৎপাদন হয় ৪৮ লাখ।