ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে মত

দেশে এখন
0

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ফের দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার চায় না তার দল। যদিও এ ইস্যুতে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিয়েছে বৈঠকে অংশ নেয়া দলগুলো। আর সংস্কার নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পরই নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পাশাপাশি জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে একমত পোষণ করেছে সবকয়টি দল। পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিও উঠে এসেছে কমিশনের প্রথম সভায়।

দল মত জাতপাত ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়েছিল তরুণ কিশোর জোয়ান বৃদ্ধ। ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ এক বাংলাদেশ গোটা পৃথিবীর কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে ধীরে ধীরে ফাটল দেখা দিতে শুরু করে সে ঐক্যে। বিশেষ করে নির্বাচন নাকি সংস্কার, আসনভিত্তিক নাকি সংখ্যানুপাতিক ভোট, আগে জাতীয় নির্বাচন না কি স্থানীয় সরকার নির্বাচন? এসব ইস্যুতে এখন যোজন যোজন দূরে রাজনৈতিক দলগুলো। ১১টি সংস্কার কমিশনের পর ঐক্য প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। যার প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি নিজেই। ঐকমত্য কমিশনের সভাকে ঘিরে আবারও এক টেবিলে রাজনৈতিক দলগুলো।

আজ (শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল তিনটায় রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে শুরু হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সভা। যার মূল আলোচনার ইস্যু ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা।

বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও সভায় যোগ দিয়েছে বাসদ, ইসলামী আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, গণফোরাম, বিজেপি, এবি পার্টি এবং গণঅধিকার পরিষদ।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, কীরকম বাংলাদেশ দেখতে চায় জনগণ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এ সভা থেকেই তা নির্ধারিত হবে। এটি একটি ঐতিহাসিক দিন।

শফিকুল আলম বলেন, 'আজকে মহৎ একটা উদ্যোগ শুরু হলো এবং এই দ্বিতীয় যাত্রার মাধ্যমে কীরকম বাংলাদেশ আমরা চাই সেটা নির্ধারিত হবে। ২৬টি দল এবং জোটের প্রায় ১০০ জনের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ছিলেন। অনেকে কথা বলেছেন, কথা এখনও চলমান। আমরা যে বাংলাদেশকে গড়তে চাচ্ছি যেই ডায়ালগের মাধ্যমে তার প্রতি দেশের এবং আন্তর্জাতিক সবার সমর্থন আছে। আন্তর্জাতিক যতগুলো বড় বড় দেশ আছে তাবা বলেছে, তোমাদের কী চাই? মরা তোমাদের সাথে আছি। এবং একইসাথে জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থন আছে।'

টানা সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষেই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, সবাইকে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে এটাই মূলকথা। অতিদ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে মন্তব্য করে ফখরুল জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়। অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমীর জানান, সংস্কার নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা আশা করবো যে খুব দ্রুত এই সংস্কারের ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি হবে, সেটার উপর ভিত্তি করে অতিদ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে হতে হবে, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন।'

বৈঠকে অংশ নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পাশাপাশি অবশ্যই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। নিষিদ্ধ করতে হবে আওয়ামী লীগকে। এ সময় জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হবে কি হবে না, তা নিয়েও পক্ষে বিপক্ষে মত দেয় দলগুলো।

আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ' আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করেন বা জাতীয় নির্বাচন আগে করেন, কিন্তু আপনার প্রশাসনিক কর্তৃত্বটা লাগবে। আমি এটা উনাদের পরামর্শ দিয়েছি যে, আপনাদের মধ্যে একজন উপদেষ্টা ছদ্মবেশে বের হন, ছিনতাইকারীর কবলে পড়লে, থানা থেকে আহ্বান করলে পুলিশের কী সাহায্য পাওয়া যায় এটা আপনারা সরেজমিনে দেখেন।'

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, 'আওয়ামী লীগকে আমরা নিষিদ্ধ ঘোষণা দেখতে চাই। একটা সন্ত্রাসী সংগঠন হওয়ার জন্য যা যা দরকার প্রতিটি আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছর ধরে করেছে। বাংলাদেশের মানুষের উপর গণহত্যা ঘটিয়েছে, ভোট ডাকাতি করেছে, অর্থনৈতিক লুটতরাজ করেছে, জনগণের উপর আক্রমণ করেছে।'

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই সভার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেয়, দলগুলোর মধ্যে কতটা ঐক্য তৈরি হয়, তা দেখার অপেক্ষায় এখন গোটা জাতি।

এসএস