জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে আন্তর্জাতিক দলিল বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। এটি শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারকে সহজ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও মত তাদের। এই প্রতিবেদনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের এভিডেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর।
জুলাই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমাতে শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মতো ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন করার প্রমাণ মিলেছে।
এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠী, সংগঠন এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জড়িত ছিল। এসব তথ্য উঠে এসেছে জুলাই আগস্টে গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দলের প্রতিবেদনে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা জাতিসংঘের এই রিপোর্টকে একটি আন্তর্জাতিক দলিল বলছেন। তাদের মতে, তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশের বিষয়ে জাতিসংঘের এমন রিপোর্ট জুলাই গণহত্যার বিচারের গুরুত্ব তুলে ধরে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন বলেন, ‘সমসাময়িক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ বাংলাদেশের মতো একটা ক্ষুদ্র রাষ্ট্র বা তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রের বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করেছে যা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে যুক্ত, আমাদের সার্বভৌমত্বের সাথে যুক্ত, আমাদের দেশের অস্থিতিশীলতার সাথে যুক্ত। এবং আমাদের দেশ আসলে দেশ হিসেবে থাকবে কি না বা থাকরে কীভাবে থাকরে? আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ কী হবে? এর সবকিছু নির্ভর করছে যে বিষয়ের উপরে সে বিষয়ে জাতিসংঘ একটা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে অত্যন্ত নিরপেক্ষ একটা তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে।’
এই রিপোর্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারকে সহজ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও মত এই বিশ্লেষকের।
ড. রুহুল আমিন বলেন, ‘জাতিসংঘের রিপোর্ট প্রকাশের পর আমাদের এ কাজ অত্যন্ত সহজ হবে। সহজ হওয়ার কারণ অনেক প্রমাণ যেটা আমরা ন্যাশনালি জানলেও পাবলিশ করতে কমফোর্ট না বা ভয় করছি একটা কিছু হতে পারে, সেটা যখন জাতিসংঘের সাথে মিলে যাবে তখন দ্রুত একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারবো।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলছেন, জাতিসংঘের এই রিপোর্টকে গণহত্যার বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এতে কোনো আইনি জটিলতা নেই বলেও জানান তিনি।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় যে আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘ যখন তদন্ত করে একটা রিপোর্ট দিয়েছে এবং তারা কিন্তু গ্রাইন্ড লেভেলে তদন্ত করে এই রিপোর্টটা দিয়েছে। সুতরাং এই রিপোর্টটা সরাসরি এভিডেন্স হিসেবে আমরা ব্যবহার করবো। এটা ব্যবহার করতে কোনোরকম আইনের জটিলতা নেই। এবং এটা অসম্ভব গুরুত্ববহ তথ্য ঐতিহাসিক প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তাদের নিরপেক্ষতার ব্যাপারেও প্রশ্ন তোলা কঠিন যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্য। সুতরাং আমরা যে তদন্ত করছি তার সাথে কিন্তু তারা আজকে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এটার সাদৃশ্য আছে।’
প্রায় কয়েক মাস বাংলাদেশে অবস্থান করে আট সদস্যের জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে সরেজমিন তদন্ত করে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই সময়ে ২৩০টিরও বেশি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
সাক্ষাৎদাতাদের মধ্যে ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষার্থী , আন্দোলনকারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ীসহ, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এছাড়া আরও ৩২টি অতিরিক্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, যেখানে সাবেক ও বর্তমান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তারা রয়েছেন। আছেন রাজনীতিবিদ ও বিচারবিভাগের কর্মকর্তারা।