নড়াইল সদরের দারিয়াপুর গ্রামের সন্তান সম্ভবা আফরোজা বেগম। গর্ভবতী এই নারী নড়াইল সদর হাসপাতালে এসেছিলেন সন্তান প্রসব করানোর আশায়। তবে চিকিৎসক সংকট ও বেশ কিছু জটিলতায় তাকে রেফার্ড করা হয় যশোরে। তবে কৃষক পরিবারের এই রোগীকে যশোরে নিতে অ্যাম্বুলেন্স বাবদ বাড়তি অর্থ খরচ হয় পরিবারের। সেই সঙ্গে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
রোগী আফরোজা বেগমের স্বজনদের একজন বলেন, ‘রোগীকে এখানে এনেছিলাম। পরে বলে এখানে আইসিইউ নেই। আপনারা যশোর মেডিকেলে নিয়ে যান।’
শুধু আফরোজা নন, নড়াইলের লোহাগড়া, কালিয়া ও নড়াইল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসলে প্রতিদিন এভাবে অসংখ্য রোগীকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে পাঠানো হচ্ছে পাশের জেলা যশোর, খুলনা অথবা রাজধানী ঢাকায়। যাতে বাড়তি সময়ের পাশাপাশি খরচ করতে হয় কয়েকগুণ বেশি অর্থ।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘থানা কেন? সদর লেভেলও ভালো কোনো চিকিৎসক নেই এখানে। যার ফলে আমাদের পাশের জেলায় যেতে হয়।’
আরেকজন বলেন, ‘কোন ধরনের বড় অপারেশন নড়াইলে হয় না।’
৫০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতালটি ২০০৭ সালে ১শ' শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে এখনও চলছে ৫০ শয্যার লোকবল দিয়ে। ১শ' শয্যার হাসাপাতালে বিশেষজ্ঞসহ ৪০ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১৯ জন।
কনসালটেন্ট ১৯ জনের বিপরীতে ৭জন, মেডিকেল অফিসারের ৫টি পদ থাকলেও আছে মাত্র ২জন। আর টেকনিশিয়ান অ্যাসিসট্যান্টসহ ৪র্থ শ্রেণির অন্তত ২০৮ জন কর্মচারীর জায়গায় আছে মাত্র ৯২ জন। অথচ এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসা নিতে আসে ৩শ জনের বেশি রোগী। ফলে চিকিৎসা দিতে হিমশিম অবস্থা চিকিৎকদের।
একই অবস্থা লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। কালিয়া উপজেলায় ৩৫ জন ডাক্তারের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ১৭ জন, লোহাগড়ায় ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে ১৪ জন।
চিকিৎসক সংকটে রোগীদের সেবা ব্যাহত হচ্ছে-- বলছেন হাসপাতালের আরএমও। তবে সংকট সমাধানে প্রচেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
নড়াইল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সুজল কুমার বকশি বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যেন মানুষের সেবা দিতে পারি। আমাদের এখন জনবল নিয়োগ দেয়া দরকার।’
জেলা সিভিল সার্জন বলছেন, বর্তমানে ৪৭ শতাংশ ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে। জনবল নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে ।
নড়াইল সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুর রশীদ বলেন, ‘২৫০ বেডের হাসপাতালের অনুমোদন হয়ে আছে। এখন ১০০ বেডের হাসপাতালের জন্য জনবল আছে। সেখানে বেশি জনবল প্রয়োজন।’
গেল একবছরে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৮ হাজার রোগী। আর আউটডোরে সেবা নিয়েছেন ২ লাখ ৭৩ হাজারের বেশি রোগী।