কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের সামনে সহিংস বিক্ষোভের মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনের অফিস ভাঙচুর। পোড়ানো হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
প্রথমে বিক্ষোভের ডাক, পরে আক্রমণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে থাকলেও শুরুতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের তেমন ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। পরে পুলিশ বাহিনী ও টিএসআর সদস্যরা যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ততক্ষণে হাইকমিশনের ভেতরের আসবাবপত্র সব ভেঙে ফেলা হয়।
আগরতলায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হওয়া ভিয়েনা কনভেনশন সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন সংকটের চূড়ান্ত সীমানায় রয়েছে বলেও মত তাদের।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবির বলেন, 'ওখানে যেটা ঘটেছে সেটা নিশ্চিতভাবেই ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন। তার কারণ হলো ভিয়েনা কনভেনশনে পরিষ্কার করে বলা আছে যে, কোনো স্বাগতিক দেশ অন্য দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সম্পদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব তাদের। সেখানে যদি সে সুরক্ষা না থেকে থাকে তাহলে দায়িত্বটা তাদের ঘাড়েই পড়ে।'
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক মো. শহীদুজ্জামান বলেন, 'আমার মনে হয় অলরেডি আমরা পিক অফ দ্যা ক্রাইসিস মোমেন্টে পৌঁছে গিয়েছি। কারণ এর চেয়ে খারাপের দিকে যাওয়া মানে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া। এবং সেটা বাংলাদেশও চাইবে না ভারতও চাইবে না।'
ভারতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই এমন ঘটনা পরিকল্পিত মনে করে ঢাকা। প্রথমে প্রতিবাদলিপি ও পরে হাইকমিশনারকে জরুরি তলব করে প্রতিবাদ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে সকল প্রকার ভিসা ও কনস্যুলার সেবা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগরতলার বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশন।
হামলার জবাবে জোরালো প্রতিবাদ করায় কূটনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। যা ভারতের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। তবে এ ঘটনায় ভারতের দুঃখ প্রকাশ ইতিবাচক।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক মো. শহীদুজ্জামান বলেন, 'বাংলাদেশও কিন্তু পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে ভিসা ইস্যু করা বন্ধ, অফিস আপাতত বন্ধ। কাজেই এই যে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ বাংলাদেশ নিয়েছে এটা ভারতের জন্য যথেষ্ট অপমানজনক। এবং এই অপমানটা তারা অর্জন করেছে।'
দু'দেশের সম্পর্ক এমন সংকটে পৌঁছানোর পেছনে ভারতের কিছু মিডিয়াকেই অনেকটা দায় দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। বলছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনারও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে এতে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক মো. শহীদুজ্জামান বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়ার কথা শুনলে মনে হয় যেন যেকোনো সময় যুদ্ধই লেগে যাবে। আমার মনে হয় এই পুরো বিষয়টাই নাটক। আর এখানে অর্থের লেনদেন হচ্ছে। আমাদের এখানকার বিগত শাসক গোষ্ঠী, তারা প্রচুর অর্থের ছড়াছড়ি করেছে। এবং সে অর্থের একটা বড় অংশ এই ইন্ডিয়ার মিডিয়ার পেছনে খরচ করা হয়েছে।'
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবির বলেন, 'আমরা দেখতে পাচ্ছি একটা বিভ্রান্তি, মিডিয়াতে এক ধরনের অপপ্রচার চলছে। এক ধরনের অতিরঞ্জন মিথ্যাচার চলছে। এটা যদি ক্রমাগত চলতে থাকে তাহলে কিন্তু এই ধরনের ঘটনা আবার ঘটার একটা আশঙ্কা থাকবে।'
১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশনের চুক্তি অনুযায়ী, ভিনদেশের দূতাবাসের জন্য জায়গা বরাদ্দের পাশাপাশি সেখানে কর্মরত কূটনীতিকদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয় দেশগুলোকে।