১৪০ কেজি ওজনের বিশাল আকৃতির হামুর মাছ গভীর সাগর থেকে ধরা হয়েছে। সুস্বাদু এ মাছের দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা। প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার টাকার এ মাছ একজনের পক্ষে কেনা অসম্ভব। তাই বিক্রেতার ভরসা অনলাইন। দোকানের ফেসবুক পেজে শুরু হলো বিশাল এ মাছের লাইভ প্রচার। মুহূর্তেই সাড়া পড়ে গেলো দেশে-বিদেশে। একের পর এক অনলাইনে অর্ডার আসায় বিক্রিও হলো কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই।
বাজারের চিরচেনা চিত্রের বিপরীতে এ যেনো এক ভার্চুয়াল মাছের জগৎ। বিচিত্র সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া, স্কুইড থেকে শুরু করে হরেক রকম মাছের সমাহার অনলাইন মাছ বাজারে। বন্দরনগরীর সদরঘাটে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক বিক্রয় কেন্দ্র। যাদের সবারই মূল বিক্রি অনলাইনে।
দৈনন্দিন ব্যস্ততায় বাজারে যাওয়ার সময় হচ্ছে না। কিংবা হঠাৎ বাসায় এসেছেন মেহমান। ফ্রিজেও নেই পর্যাপ্ত মাছ। এ অবস্থায় নিজের প্রয়োজন কিংবা মেহমান আপ্যায়নে কী করবেন? এক্ষেত্রে আপনার ভরসা হতে পারে মাছ বিক্রির অনলাইন প্লাটফর্মগুলো। যারা নদী বা সাগরের এমন টাটকা মাছ পৌঁছে দিবে আপনার দোরগোড়ায়। গেলো চার থেকে পাঁচ বছরে সারাদেশেই এমন অনেক প্লাটফর্ম গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রামেও সামুদ্রিক মাছের জন্য দিনকে দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইনে মাছ ব্যবসা।
এসব দোকানে প্রথমে মাছের ছবি বা ভিডিও ধারণ করা হয় যেন ক্রেতা মাছ সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা পান। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেসব পোস্ট করা হয় যথাযথ বর্ণনা দিয়ে। এরপর ক্রেতার সাড়া মিললেই হোম ডেলিভারি দেয়া হয়।
ফিশ ওয়ার্ল্ড সিটিজির স্বত্বাধিকারী জাফর আলম বলেন, 'আমাদের গ্রাহক যারা, তাদের টার্গেট করে সেই কোয়ালিটি আইটেমের মাছ কালেকশন করি। সেখান থেকে আবার প্রসেস করে আমাদের হোম ডেলিভারি সিস্টেম আছে।'
তবে কেবল বাসা বাড়িতেই নয়। অনলাইন দোকানগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনেরও অন্যতম সহায়ক। বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষেও পর্যাপ্ত ফরমায়েশ পান ব্যবসায়ীরা। তবে এই বিপুল ক্রয়াদেশের জন্য প্রয়োজন অনলাইন পেইজের বিশ্বস্ততা। যা এখানকার ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে অর্জন করেছেন।
চট্টগ্রাম ফিশ ফিল্ডের স্বত্বাধিকারী আব্দুল কাদের বলেন, 'বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে এই ব্যবসাগুলো প্রোপারলি করছে কি না সেটা দেখার জন্য বিভিন্ন তত্ত্বাবধায়ক টিম আছে।'
দেশে দিন দিন বাড়ছে সি ফুডের চাহিদা। বৈশ্বিক ওয়েবসাইট স্ট্যাটিস্টার তথ্যমতে, ২০২৪ সালে মাছ ও সি ফুড থেকে ১৯ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আহরণ করবে বাংলাদেশ। এছাড়াও ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই খাতটি আট শতাংশ হারে বাড়বে বলেও জানাচ্ছে স্ট্যাটিস্টা। চট্টগ্রাম, কুয়াকাটা, কক্সবাজার, খুলনায় সি ফুড হাতের নাগালে পেলেও অন্যান্য স্থানে ততটা দেখা মেলে না। এমন অবস্থায় ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে অনলাইন বাজারের কোনো বিকল্প নেই।
চট্টগ্রাম তাহমিদ সি ফুডসের স্বত্বাধিকারী মো. ইউনুছ আরমান বলেন, 'ঢাকা ছাড়া অন্যান্য সাইটে কোড়াল আইটেম একটু বেশি চলে। আমাদের ফোন কলের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে আমাদের অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেই।'
মাছ বিক্রির লভ্যাংশের পাশাপাশি অনলাইন ভিডিও, লাইভে মাছ প্রদর্শন করেও বাড়তি আয় করছেন এখানকার বিক্রেতারা।