গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ১১ লাখ কোটি টাকার বেশি। সুশাসনের অভাব, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে খেলাপি ঋণ জর্জরিত ব্যাংকিং খাত। খেলাপি ঋণ ছাড়িয়েছে ২ লাখ কোট টাকা। এসব চিত্রই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাপক কেলেঙ্কারি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর থেকেই অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নের বিভিন্ন পথ খোঁজার চেষ্টা করতে থাকে ইউনুস সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক, ব্যবসায়ী সংগঠনসহ সরকারি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ কীভাবে সংস্কার করা যায় তা নিয়ে আলোচনার আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডি।
সংস্থাটি বলছে আগামী দুই বছর দেশের অর্থনীতিতে তিন ধরনের ঝুঁকি থাকবে। এগুলো হলো মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দা এবং দারিদ্র ও বৈষম্য। এছাড়া দুর্নীতি , মূল্যস্ফীতি, উচ্চকরহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা বাণিজ্য। এছাড়া আছে জ্বালানি ঘাটতি, বেকারত্ব, স্বাস্থ্যখাতের দুরবস্থা ও সামাজিক অবক্ষয়।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগামী ২ বছরের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ঝুঁকি বিবেচনায় তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দা এবং দারিদ্র্য। এছাড়াও আছে বৈষম্যবেকারত্ব। বাংলাদেশে কোনো মনিটরিং পলিসি নেই। এর ফলে প্রতিদিন বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একা কখনোই এই মূল্যস্ফীতি কন্ট্রোল করতে পারবে না।’
অর্থ পাচারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দায়ী করেন বক্তারা। উঠে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংস্কার প্রসঙ্গও।
সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘জ্বালানি ঘাটতি, স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা এবং সামাজিক অবক্ষয়। এছাড়াও আমাদের সকল সেবাগুলোকে একই ছাদের নিচে নিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বাহিরে অবৈধভাবে টাকা পাচার করার কারণেই দেশের ব্যাংকগুলোর এ অবস্থা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ।’
ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার মানদণ্ডে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ও ভারতের চেয়ে পিছিয়ে বলেও উঠে আসে আলোচনায়। বলা হয় অর্থনীতির তুলনায় ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা রেগুলারিটি কমিশন তৈরির প্রস্তাবনা দেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশে অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কারণ দেশের যে অবস্থা ছিল সেখান থেকে বের হওয়ার জন্যই কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ফলে যদি ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এরকম একটা ব্যবসায়িক রেগুলারিটি কমিশন প্রয়োজন তাহলে অবশ্যই সেটি অন্তর্বর্তী সরকার করবে।’
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় অংশগ্রহণ বাড়াতে ব্যাংক ঋণ আরো সহজ করার তাগিদ দেয়া হয় আলোচনায়।