ভ্রমণ
দেশে এখন
0

প্রায় দুইমাস পর ভেসে উঠলো রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু

কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে যাওয়ার একমাস ২৬ দিন পর ভেসে উঠেছে রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু। ফলে সেতু ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা আর থাকছে না। খুব শিগগিরই দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হবে-সেতু কর্তৃপক্ষ। তবে নিরাপত্তার সংকটে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পার্বত্য ৩ জেলা পর্যটক ভ্রমণে প্রশাসনের 'বিরত' থাকার সময়সীমা বহাল থাকায় পর্যটন বাণিজ্যে মন্দ কাটছে না সহসা।

আজ (বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর) দুপুরের পরে সেতুর পাটাতন থেকে নেমে যায় পানি। ফলে নিরাপত্তার জন্য সেতু ভ্রমণে দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে গত ২৩ আগস্ট কাপ্তাই হ্রদের পানিতে তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় পর্যটন ঝুলন্ত সেতু। ফলে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ওইদিন থেকে সেতু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। সেতু ডুবে থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যান পর্যটকরাও। আয় বন্ধ থাকায় এসময় দৈনিক ৭০ হাজার টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতু কর্তৃপক্ষ।

রাঙামাটিতে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতুকে ঘিরেই। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ নির্মাণের পর ১৯৮৫ সালে দুই পাহাড়ের মাঝখানে তৈরি করা হয় এই আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতুটি।

তাই পর্যটকেরা প্রথমেই ছুটে যান পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায়। বছরে প্রায় ৫ লাখের বেশি দেশি- বিদেশি পর্যটক সেতুটি দেখতে আসেন। এতে জনপ্রতি ২০ টাকা প্রবেশ ফি, গাড়ি পার্কিং ও ট্যুরিস্ট বোট ইজারা থেকে বছরে আয় আসে অন্তত আড়াই কোটি টাকা।

পর্যটন নৌঘাটের ব্যবস্হাপক ফখরুল ইসলাম বলেন, আজ দুপুরে সেতু থেকে পানি পুরোপুরি নেমে গেছে। এখন সেতুর পাটাতন ও রঙের কাজ করা হচ্ছে। আরও দুয়েকদিন হয়তো লাগবে কাজ শেষ হতে।

সেতুর টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সোহেল খান বলেন, 'সেতু পুরোপুরি প্রস্তুত হলেই সেতু ভ্রমণে বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রি কার্যক্রম শুরু করবেন কর্তৃপক্ষ।'

রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, 'আজ সেতুর পাটাতন থেকে পানি নেমে গেছে। এখন সেতুর মেরামত ও সংস্কার কাজ চলছে। প্রস্তুত হলেই খুব শিগগিরই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। সেতু ভ্রমণে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এসময় আয় বন্ধ থাকায় এখন দৈনিক ক্ষতি হয়েছে গড়ে ৭০ হাজার টাকার বেশি।'

হ্রদের পানি ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফিট মিনস সি লেভেল । কিন্তু বৃষ্টি হলেই পর্যটন সেতুসহ শহর এলাকায় হ্রদ তীর বর্তি বসতঘর ডুবে যায়। মূলত হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়।

এদিকে সেতুর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হলেও পর্যটকদের তিন পার্বত্য জেলা ভ্রমণে বিরত থাকার সময়সীমা চলবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। ফলে পর্যটন বাণিজ্যে মন্দ কাটছে না সহসা।

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জেরে ২৪ সেপ্টেম্বর ৮ অক্টোবর পর্যন্ত চার দফায় সাজেক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।

১ অক্টোবর খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সোহেল রানাকে পাহাড়ি ছাত্রা পিটিয়ে হত্যা করলে আবারও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

এর মধ্যে ৬ অক্টোবর নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে এবার পার্বত্য তিন জেলায় কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার ঘোষণা দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ।

সর্বশেষ নিরাপত্তা সংকটে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ৮-৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করে তিন জেলা প্রশাসন। ফলে দুর্গাপূজা ও পাহাড়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের ছুটিতে আসছেন না পর্যটক। এতে রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্রিক পাঁচ খাতে দৈনিক ১ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।