গতকালই এইচএসসির ফলাফল পেয়েছে রাজধানীর মান্ডার মুস্তাকিম। ফলাফল নিয়ে উচ্ছ্বাস তো দূরের কথা, চারদিন ধরে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছে সিটের জন্য। স্বজনদের অভিযোগ, মুগদা হাসপাতালে ভর্তি লিখলেও সিট না থাকার কারণে শুরু করা যাচ্ছে না চিকিৎসা।
মুস্তাকিমের মা বলেন, 'আমি কান্না করে দিয়েছি যে, আমার ছেলে অসুস্থ, আমার কাছে খাতা আছে আমি নিচে বিছিয়ে দিয়ে সেখানে ওকে নিয়ে থাকি। বলে না সেই সিস্টেম নেই। দরকার হলে আপনারা পরিচালকের কাছে বিচার দেন।'
এই মাসে এই হাসপাতালে ভর্তির বেশিরভাগই জ্বর, রক্তবমি আর গা ব্যথায় ভুগছেন। এছাড়া নাক, মুখ দিয়ে রক্ত আর শ্বাসকষ্টও রয়েছে অনেকের। ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানালেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষার পর সেটি নেগেটিভ আসায় অনেকেই চিকিৎসা শুরু করছেন দেরিতে ফলে শকে চলে যাচ্ছেন অনেকেই।
ডেঙ্গু রোগী মুস্তাকিম হাসপাতালের বেড না পেয়ে মাটিতেই শুয়ে রয়েছেন। ছবি: এখন টিভি
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কৃষপদ বণিক বলেন, 'মাল্টি অর্গানে অ্যাটাক করার জন্য শরীর দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর একটা বিষয় হচ্ছে রোগীর ব্লাডে ডেঙ্গু পজিটিভ আস না। এনএস ওয়ান নেগেটিভ কিন্তু ডেঙ্গু জ্বর। এর জন্য আমাদের ডাক্তারদের অন্যান্য রোগের সিনড্রম এবং ব্লাডের রিপোর্ট দেখে কনফার্ম হতে হয়।'
সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবরে মাঝামাঝি পর্যন্ত দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়েছে মুগদায়। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে তাই হিমশিম অবস্থা চিকিৎসক এবং নার্সদের। ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে অনেকের।
হাসপাতালটির সহকারি পরিচালক জানালেন মেঝেতে রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হয় না তাই এবার গণহারে ভর্তি নিচ্ছেন না তারা। এছাড়া শক সিনড্রোমে গিয়ে আইসিইউতে ভর্তি রোগীদেরই মৃত্যু বেশি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. সত্যজিৎ কুমার সাহা বলেন, 'আইসিইউতে সবসময় তিন থেকে চারজন রোগী ভর্তি থাকে। ম্যাক্সিমাম রোগী ওখান থেকে মৃত্যুবরণ করেন। এই মুহূর্তেও তিনজন রোগী আইসিইউতে বর্তি আছে। আমাদের একটা ডেথ রিভিউ কমিটি আছে। ডারা প্রতিমাসে ডেথ রিভিউ করে। সেপ্টেম্বরে আটজন মারা গিয়েছিল, এবং তাদের ৯০ শতাংশই ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে মারা গেছে। যখন তারা আসে তাদের দেখা যাচ্ছে যে প্রেসার ফল করে গেছে। এর জন্য শরীরের অন্যান্য অর্গানগুলো কাজ কম করে।'
মুগদা হাসপাতাল ছাড়াও রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। ডেথ রিভিউ অনুযায়ী অন্যান্যবারের চেয়ে এবার ডেঙ্গু রোগীর প্রেসার দ্রুত কমে যাওয়ায় মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।
ডিএনসিসি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাদিয়া সুলতানা বলেন, 'আমাদের এখানে যে কয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তারমধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রেফার্ড হয়ে মৃত্যু হয়েছে। আজ সকালে আমাদের টোটাল মৃত্যুর সংখ্যা চারজন। আমরা যে অবস্থায় রোগীগুলোকে পেয়েছি যে শকের রোগী, ব্লাড প্রেসার একদমই ছিল না, সে অবস্থা থেকে বেশিরভাগ রোগীই ভালো হয়েছে।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৯৭ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৮০ জন অন্যদিকে অক্টোবরের মাঝামাঝিতেই আক্রান্তের দাঁড়িয়েছে সংখ্যা ১৩ হাজার ৮২৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬০ জনের। এই পরিসংখ্যান যেন অক্টোবরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবারই পূর্বাভাস দিচ্ছে।