অসুস্থ বৃদ্ধ মাকে বড় পাতিলে বসিয়ে পানিতে ভাসিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন দুই সন্তান। ছবি: এখন টিভি
বাড়িতে ওঠেছে বুক সমান পানি। অসুস্থ বৃদ্ধ মাকে বড় পাতিলে বসিয়ে পানিতে ভাসিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন দুই সন্তান। হালুয়াঘাট পৌর এলাকায় এমন পানি কখনো উঠেনি বলে দাবি তাদের।
একই অবস্থা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার পানিবন্দি প্রায় ৩০ হাজার পরিবারের এক লাখেরও বেশি মানুষের। গলা পানি মাড়িয়ে ছুটছেন উঁচুস্থানে আশ্রয়ের খোঁজে। ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাটের বোরাঘাট নদীর বাঁধ ভেঙে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট-বসতভিটা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি ওঠায় দুর্ভোগ বাড়ে রোগী ও স্বজনদের। এখনো ১২ ইউনিয়নের ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি শুধু হালুয়াঘাটেই।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘আমার এই বয়সে এত বড় বন্যা দেখি নাই। আমার ঘরেও কোমড় সমান পানি।’ আরেকজন বলেন, ‘পানি এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের শুকনা খাবারের অভাব। রান্না তেমন করতে পারছি না।’
পানি বাড়ায় ধোবাউড়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের সবকটিই প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি প্রায় ৬ হাজার পরিবার। ফসলের খেত ও মাছের খামার তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা এই অঞ্চলের কৃষক। এখনো কোনো ধরনের সহায়তা মেলেনি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘কারও কাছ থেকে তেমন সাহায্য পাচ্ছি না। কেউ এগিয়েও আসছে না।’
তবে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় দুর্গতদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে নগদ অর্থ ও শুকনো খাবার। জেলা প্রশাসক মো. মফিদুল ইসলাম বলেন, 'পানিবন্দি থেকে মুক্তির জন্য আমরা ৬ টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছি। মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সকল ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে যেন মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়।'
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, দু'একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি উন্নতি হবে। দ্রুত মেরামত করা হবে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ। এছাড়া বোরাঘাট ও নেতাই নদীর তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও সম্পন্ন হয়েছে।
ময়মনসিংহের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখলাক উল জামিল বলেন, 'বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এরিয়া পরিদর্শন করবো। যেসব জায়গা মেরামত ও ব্রিজ করার প্রয়োজন সেইসব জায়গা অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
এদিকে বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ায় খামারিরা দিশেহারা হলেও চাষের মাছ ধরছেন অনেকেই।
ভারি বৃষ্টি আর ভারতের পাহাড়ি ঢলে প্রায় প্রতি বছরই নেতাই নদীর বাঁধ ভাঙে আর দুর্ভোগ বাড়ে এই অঞ্চলের মানুষের। এভাবেই বাড়িঘর ফেলে রেখে কোনো রকমে জীবন বাঁচায় দুর্গত এলাকার মানুষ। বন্যা এলেই মেলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি। তবে তা আর বাস্তবায়ন হয় না।