নদী নেই কিন্তু পানি পাড়াপাড়ের জন্য হাঁকডাক। কৌতূহল থেকেই 'এখন টেলিভিশন' এরর পাড়াপাড় বাহনে উঠে পড়া। টিকাটুলি ওভার ব্রিজ এলাকা থেকে গন্তব্য সেন্ট্রাল উইমেন কলেজ। এ এলাকাটি প্রশাসনিক হেডকোয়ার্টার সচিবালয় থেকে মোটমুটি এক কিলোমিটার দূরত্বে, রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবন থেকে আধা কিলোমিটার দূরের। যেতে যেতে কথা হয়, ভ্যানচালক আনিসের সঙ্গেও।
তিনি বলেন, 'এই অল্প জায়গার জন্য কেউ ৮০ বা ১০০ টাকা দিয়ে রিকশায় ওঠে না ভাড়া বেশি হওয়ার কারণে। একটু জলাবদ্ধতা হলে এখানে ভ্যানে ওঠে। আমাদেরও সুবিধা হয়।'
অফিসমুখী আর স্কুলগামীদের ভোগান্তি যে আছে তা সবারই জানা। কিন্তু এই যে একটু বৃষ্টি হলেই যে সড়কের এই নদীময় পরিস্থিতি হয় তার ভুক্তভোগী কে নয়? দেখা গেল, ডুবে গেছে ডিসপেনসারি, ভেসে যাচ্ছে কাচা সবজির দোকান।
রাস্তায় জলাবদ্ধতা পারাপারে ব্যবহার করা হচ্ছে ভ্যান। ছবি: এখন টিভি
একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'আমি ক্লাস করতে আসছিলাম, এসে তো আমি পুরো অবাক হয়েছি। কোনো রিকশা পাচ্ছিলাম না। পরে এই ভ্যানে উঠলাম। একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তা ডুবে যায়। কিছু করার নেই। আমাদের তো যেতে হবে।'
স্থানীয় একজন বলেন, 'গুলশান-বনানী হলো ভিআইপি এলাকা। সরকারের নজর থাকে ওইদিকে। দিকে সরকার দেখে না। হালকা বৃষ্টি আসলেই এদিকে সব ভেসে যায়।'
দেখতে ছোটখাট কোনো খাল মনে হলেও আসলে পথটি নদী বা খাল নয়। আর এ কারণে চলাচলের এ পথটি আরও বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে, কারণ জলাবদ্ধ এ সড়কের নিচেই আছে খোলা ম্যানহল এবং খানাখন্দ। সব মিলিয়ে যে চিত্রটা দেখা যায়, শুধু এ অভয় দাস লেন নয়, পুরো টিকাটুলির অলিগলি একই চিত্র। কিন্তু শহর ও শহরতলীর অন্য সড়কগুলো কি ভালো?
বলা যায়, গুলশান, বনানী, উত্তরার মত উচ্চবিত্তের এলাকা বাদে প্রতিটি অলিগলির পরিস্থিতি এমন। এই যেমন গেন্ডারিয়ার আশপাশে দয়াগঞ্জ, শনির আখড়া, উত্তরখান বা মান্ডার সড়কগুলোর অবস্থা কতদিন ধরে যে ভালো নয় তাও ভুলে গেছের প্রান্তিক মানুষগুলো। আর একে বড় বৈষম্য হিসেবে দেখছেন ভুক্তভোগী নাগরিকরা।
স্থানীয় একজন বলেন, 'রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি তো ভয়াবহ খারাপ। নতুন সরকার কিছু করবে না কি? পুরান সরকার তো যা করার করেই গেছে।'
একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'আমি ওয়ারি স্কুলে পড়ি, এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। এক সপ্তাহের বেশি হচ্ছে এই রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। বৃষ্টি হইলে এই রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করা যায় না।'
অন্য একজন স্থানীয় নাগরিক বলেন, 'গুলশান-বনানী-উত্তরা এলাকাগুলো যে এতো উন্নত। ঢাকা সিটির মধ্যে গেন্ডারিয়া এতো উন্নত না। আমরা সবাই তো নিম্নমানের মানুষ দেখে এই অবস্থা। সংবিধান অনুযায়ী সবাই সমান হইলেও বাস্তবে সেটা আইনে রূপান্তর হয় না। আমরা একটা বৈষম্যের মধ্যে আছি।'
নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যে দাবি উঠেছে তা বাস্তবায়ন করতে শহরের ভেতরের এ বৈষম্য ঘোচাতে হবে।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্লানার্সের সভাপতি বলেন, 'ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, 'গুলশা-বনানী এলাকায় কোথাও খোড়াখুড়ি হলে কয়েকদিনের মধ্যেই সেটা ঠিক করা হয়। বিপরীতে আমাদের শহরের অনেক প্রান্তিক এলাকা যেমন মান্ডা, মুগদা এলাকায় বছরের পর বছরও রাস্তার খানাখন্দ মেরামত করা হচ্ছে না। অনুন্নত এলাকার যেকোনো ধরনের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে জলাবদ্ধতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমারে উন্নয়ন পরিকল্পনা করা উচিত। যেন আমাদের উন্নয়ন দর্শনে যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলছি সেটা প্রাধান্য পায়।'
এসব সমস্যার গোড়ায় যে সেবা সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছাচারী খোড়াখুড়ি, উদাসীনতা শহরবাসী তা জানেন। তারা মনে করেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বৈষম্যহীন মনোভাব ও নীতি ঠিক না থাকলে যানজট আর জলাবদ্ধতার এ নগরীতে অপেক্ষাকৃত কম আয়ের মানুষের বসবাসের জায়গুলোতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না।