দেশে এখন
0

কাউনিয়ার একাধিক গ্রামে ভাঙন ঝুঁকি, আতঙ্কে হাজারো মানুষ

গতকাল (রোববার) থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় কমেছে তিস্তার পানি। পানি নামতে শুরু করায় বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। তবে কিছু জায়গায় উজানের পানির তোড়ে ভেঙেছে বসতভিটা। রংপুরের কাউনিয়ার কয়েকটি গ্রামে দেখা দিয়েছে ভাঙন ঝুঁকি। আতঙ্কে দিন কাটচ্ছেন হাজারো মানুষ। সংকট সমাধানে তিস্তা নদী খনন, শাসন ও তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

এক অনিশ্চয়তার অপেক্ষা নিয়ে বসে আছেন মো. আজগর আলী। জীবদ্দশায় সাত দশক পার করেছেন ভাঙ্গা গড়ার খেলায় দাবার গুটি হয়ে। সবশেষে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতিতে ফের হারিয়েছেন বসতভিটা। এ যাত্রায় অবশিষ্ট একটিমাত্র ঘর না ভাঙ্গলে হয়তো ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় আবার বুক বাধবেন তিস্তা অববাহিকার দুর্ভোগের অন্যতম এই প্রত্যক্ষদর্শী।

মো. আজগর আলী বলেন, ‘আগে আরও অনেক বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সামান্য দুই দিনের বৃষ্টিতে এই অবস্থা। তখন নদীতে পানি ছিল না, হেঁটে পার হয়েছি। তবে এই পানি যে কোথা থেকে আসলো আল্লাহ মাবুদ জানে।’

কেবল আজগর আলী নন। তিস্তার দুই পাড়ের পাঁচ জেলার দুই কোটি মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ এই নদীর ভারত থেকে আসা উজানের ঢল। বন্যার মত এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের অন্য অঞ্চলের জন্য ভোগান্তির নিয়তি হলেও উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনে এ যেন বার্ষিক সফরসূচি। কারণ বছরে অন্তত দুইবার এমন দুর্ভোগের খড়গ নেমে আসে তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবনে।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন জানান, ১০টা থেকে ১২টা বাড়িটা ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমরা থাকবো কোথায়, ঘর উঠাবে কে, ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমাদের থাকার জায়গা নেই।

গেলো সপ্তাহের শেষে টানা ৪৮ ঘণ্টার মাঝারি বর্ষণ উত্তরাঞ্চলে ভোগান্তি সৃষ্টি করলেও বিপদ বড় হয়নি খুব একটা। কিন্তু বৃষ্টি থামার দুইদিন পর তিস্তার এমন আগ্রাসী রূপ। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা বঞ্চিত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার ১ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে আবাদ হয় মৌসুমি সবজি।

অনিশ্চয়তার অপেক্ষা নিয়ে বসে আছেন মো. আজগর আলীসহ স্থানীয় লোকজন

সাম্প্রতিক সময়ে দু'দিনের মাঝারি বৃষ্টি আর ভারতের জলের ঢলে তলিয়েছে চর ফসলি জমিতে থাকা আমন ধান, বাদাম বীজ, মরিচসহ নানা ধরনের সবজি। ভাঙ্গনের কবলে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের চরগোনাই গ্রাম। বসতভিটা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে অস্থায়ী ঘরদোর, গবাদি পশু, হাস মুরগি। নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশু সদস্যদের।

স্থানীয়দের ভাষ্য, তিস্তা খনন করে নাব্যতা ফেরানো গেলে উদ্ধার হবে অন্তত ১৭৪ বর্গকিলোমিটার আবাদি জমি। এতে ফিরবে তাদের হারানো জৌলুস, ফসল উৎপাদন করে অবদান রাখতে পারবেন কৃষি অর্থনীতিতে। এ যাত্রার বড় বিপদ কেটে গেলেও স্থায়ী সমাধান পেতে বাংলাদেশ অংশের ১১৫ কিলোমিটার জুড়ে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি তাদের।

সংগঠক ও সমাজকর্মী রুমন বকসী বলেন, ‘বিশাল এলাকা জুড়ে স্থায়ী স্থাপনা , সরকারি-বেসরকারি, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট সবকিছু কিন্তু বিলীন হয়ে যাচ্ছে।এখান থেকে উদ্ধার পেতে হলে আমাদের তিস্তা মহা পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে তিস্তার দুই তীর বাধা হবে। আর তিস্তা খুঁড়া হবে এবং এই খোঁড়ার মাধ্যমে তিস্তার নাব্যতা ফিরে পাবে।’

এদিকে গেলো ২৪ ঘণ্টায় রংপুরের আকাশে বৃষ্টি না হওয়ায় কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবশেষ তথ্যে, গেলো দুই দিনের ভয় জাগানিয়া তিস্তার রংপুর অংশের কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার রাতে যা ছিল বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপরে। বিপৎসীমা থেকে বেশ নিচে নেমেছে লালমনিরহাটের ডালিয়া অংশের পানিও।

এদিকে সরকারি হিসাবে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার ১০ হাজার পরিবারের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিতে ডুবে রয়েছে ৮৩৩ হেক্টর জমির রোপা আমন ও ৪৫ হেক্টর জমির শাকসবজির খেত। জলমগ্ন হয়ে পড়ায় বন্ধ রয়েছে ১৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম।

এফএস