২৪ এর জুলাই হয়ে উঠেছিলো বিপ্লবের। নিপীড়িত ছাত্রজনতা দাঁড়িয়েছিল স্বরবে। বিদ্রোহে পতন হয় ১৫ বছরের দাপুটে শাসক আর সবচেয়ে পুরোনো রাজনীতিক দল আওয়ামী লীগের। ইতিহাস সাক্ষী, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যত বিদ্রোহ বিপ্লব অভ্যুত্থান তার নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্র জনতা। আর সেখানে সৈনিকরাও নিজেদের অংশ রেখেছে।
হাজার হাজার আহত আর অসংখ্য নিহতের এই অভ্যুত্থান ভেস্তে যাবে যদি না রাজনীতিক সংস্কার না হয়। তাই সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের ‘সংস্কার ও নির্বাচন’ নিয়ে আলোচনায় জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবি। শুধুমাত্র হাতবদলের চর্চার ক্ষমতার পালাবদল আবারো স্বৈরাচারের চরিত্রে ফিরে আসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘ক্ষমতাকে যদি পাহারা না দেন এ ক্ষমতা কীভাবে স্বৈরাচার হয়ে ওঠে। এজন্য প্রফেসর ইউনূসের সরকারকে কী করতে হবে চোখে চোখে রাখতে হবে, সমালোচনা করতে হবে, নজরদারি করতে হবে। নাহলে স্বৈরাচারী হতে বাধ্য।’
শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘রাষ্ট্রকে একটা সুষ্ঠু ধারার দিকে নিতে চাই সেটা তো রাতারাতি সম্ভব হবে না। অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ সময় লাগবে। তার যে প্রস্তুতি সেটি এবং জাতীয় লক্ষ্য এ বিষয়গুলো আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার জানাবে। এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।’
রাজনৈতিক দল উপেক্ষা করে কিছু করা যাবে না। রাজনৈতিক দল ও তরুণদের সমন্বয়ে গণতান্ত্রিক সরকার গড়ে তোলার দাবি আসে আলোচনায়।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটা নতুন রাষ্ট্র কীভাবে পরিগঠিত হবে সেটার উদ্যোগ নেয়া দরকার ছিল। কিন্তু তা গ্রহণ করা হয় নি। গঠনের মধ্যে সমস্যা আছে।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (অব.) বলেন, আমি উদাহরণ দিয়ে বলতে পারব অনেকগুলো আমাদের সিদ্ধান্ত রয়েছে যেগুলো আমাদের চারজন কমিশনার বিরোধিতা করার পরেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার একটা ভিন্নরূপ বিষয় নিয়ে সরকারের সাথে করেছেন।’
সংবিধান সংস্কার হবে না পরিবর্তন এমন প্রশ্নে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের ভেতরে সংস্কার করতে হবে। নির্বাচন তখনই সম্ভব যখন মানুষ অংশগ্রহণ করবে।
রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘১৯৭২ সালে আমরা কিন্তু নিজেদের রাজনৈতিকভাবে গঠন করতে পারি নি। আমাদের যে অধিকার, আন্তর্জাতিকভাবে দেয়া আছে। যে কোনো গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়া আছে। একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আছে তারা কি করে নিজেদের গঠন করবে, তারা কীভাবে একটি সংবিধান গঠন করবে উদ্ধৃতির মধ্যে। একটি আইন ব্যবস্থা রাখবে, একটা শাসন ব্যবস্থা তৈরি করবে। সকলে সে আইনটা মানবে। এটা আমাদের করতে দেয়া হয়নি। ফলে স্বভাবতই ৭২ সাল থেকে আমাদের সংবিধান ছিল একটা অবৈধ সংবিধান। আমরা আজকে যে সংস্কারের কথা বলছি, এ কথার কোনো যুক্ত নাই।’
তিনি বলেন, নির্বাচন তখনই সম্ভব যখন জনগণ আসবে নির্বাচনে। যখন এমন একটা রাষ্ট্র আমরা গঠন করতে পারবো, জনগণের প্রতিনিধিরা যেখানে সত্যিকার অর্থে সে যেতে পারবে এবং প্রশাসনের প্রত্যেকটা স্তরে জনগণ সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে।’
রাজনৈতিক ছাড়াও প্রশাসনিক সংস্কার ও অর্থনৈতিক কাঠামোও অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া প্রয়োজন। সেখানে বিশ্বে যে অর্থনৈতিক চর্চা চলছে বাংলাদেশকে অনেক লম্বা দৌড়ে থাকতে হবে বলে মনে করেন আলোচকরা।