বানের পানি কমার খবরে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে হাসি মুখে বাড়ি ফেরেন ষাটোর্ধ্ব সগুরা খাতুন। তবে, ঘর দুয়ার ও সাজানো সংসারের বিধ্বস্ত চিত্র দেখে মুহূর্তেই ফিকে হয়ে যায় সেই হাসি। পানিতে নষ্ট হয়েছে আসবাবপত্রসহ মূল্যবান সবকিছু।
সগুরা খাতুন বলেন, 'অর্থ সম্পদ কিছু নেই। এখন তো আমি নিরুপায়।'
বন্যার পানি যতই কমছে, ততোই স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। সহায়-সম্বল হারিয়ে এখন নিঃস্ব বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ। সন্তানদের নিয়ে নতুন করে বাঁচার চেষ্টা তাদের।
স্থানীয় একজন বলেন, 'ঘরে যে থাকবো, বাচ্চাদের নিয়ে খাবো। তার কিছুই নেই। সব পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক জিনিস ভেসে গেছে। ঘর দুয়ারও ভেঙ্গেচুরে গেছে।'
চলতি বছরের তৃতীয় দফার এই বন্যায় কবলিত ফেনীর সবকটি উপজেলার বিভিন্ন জনপদ। এতে নষ্ট হয়েছে মাইলের পর মাইল রাস্তা। কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ঝরেছে প্রাণ।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এই বন্যায় ফেনীতে ১১ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি ছিল। এখনও পানিবন্দি জেলার ৬০ হাজার মানুষ। বন্যার্তদের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ নিয়ে এসেছেন হাজারও স্বেচ্ছাসেবী দল। একই সঙ্গে শুকনো খাবার বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনী।
এদিকে বন্যা পরবর্তীতে স্থানীয়দের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে মাঠে কাজ করছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার -উজ-জামান বলেন, 'খাবারের সংকট, পানির সংকট আছে সেগুলো আমরা এনসিউর করবো। আমরা প্রায় ১ হাজার ২০০ জনের মতো বিভিন্ন দলে কাজ করছি। দরকার হলে আমরা আমাদের সৈনিক আরও পাঠাবো।'
নৌ-বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, ' এখানে ৬টি ইউনিয়ন আছে, প্রায় দেড় লাখ বাসিন্দা আছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারিভাবে খুব শিগগিরই আমাদের কিছু জিনিস বিবেচনা করতে হবে। আমি এই উপজেলার কথাই বলবো। আমাকে ইউএনও বলেছেন। আশা করি সরকার এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।'
পরিবেশবিদরা বলছেন, এবারের বন্যা সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল। পরিকল্পিতভাবে ডম্বুর গেট খুলে দেয়া হয়েছিল বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ প্রকতি সংরক্ষণ জোটের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, 'এটা একটা রাজনৈতিক বন্যা। আমাদের এই জন্য সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। উজানের পানি এভাবে বাঁধ দিয়ে আটকানো যাবে না। এবং যখন পানি বেশি থাকে তখন এভাবে ছেড়েও দেয়া যাবে না। আমরা এ ধরনের বাঁধগুলো রিমুভ চাই।'
এই বন্যা নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো ফেনীর জনপদকে। এটি স্মরণকালের প্রলয়ংকরী বন্যা বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।