দেশে এখন
0

কাজ শেষের আগেই চূড়ান্ত বিল পরিশোধ, উত্তর দিতে নারাজ পাউবো

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয়নি নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই ঠিকাদারকে চূড়ান্ত বিলও পরিশোধ করা হয়েছে। এদিকে তড়িঘড়ি করে বাকি কাজ শেষ করতে গিয়ে নৌকাডুবিতে নিখোঁজের পাঁচদিন পরেও তিন শ্রমিকের সন্ধান মেলেনি। গত (শনিবার, ২৭ জুলাই) গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুরে বাবুর বাজার এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজে নৌকায় করে ব্লক ফেলার সময় ৩০ শ্রমিক নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হন। তাদের মধ্যে ২৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষার আগে কাজ না করে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র যখন উত্তাল তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার ব্লক ফেলার কাজ শুরু করেন। উথাল-পাতাল ঢেউয়ের মধ্যে নৌকার ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ওজনের ভারী ভারী সব ব্লকসহ ৩০ জন শ্রমিক নৌকায় বহন করা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বা ঠিকাদার কোনোপক্ষই সেদিকে নজর দেননি।

যমুনা নদীর ভাঙন থেকে গাইবান্ধা জেলার গোঘাট খানাবাড়ি রক্ষা শীর্ষক প্রকল্পের শ্রীপুর-২ প্যাকেজের আওতায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ মিটার নদী তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো অন্তত ২০ হাজার ব্লক ফেলার কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়েছে বলে জুনেই ঠিকাদার শাহারিয়ার আহমেদকে বিল পরিশোধ করেন গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক।

চূড়ান্ত বিল পরিশোধের পর কাজটি শেষ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদারকে তাগিদ দিলে তড়িঘড়ি করে ব্লক ফেলার কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র তখন উত্তাল। এমন সময় উত্তাল ঢেউ আর স্রোত উপেক্ষা করে ভারী ভারী সব ব্লক যমুনায় ফেলতে গিয়ে ঘটে নৌকাডুবির ঘটনা।

একাধিকবার ঠিকাদার শাহারিয়ার আহমেদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন রিসিভ করেননি তিনি।

নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধান পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নে 'না' উত্তর দিয়েই ফোন রাখতে চান পাউবো কর্মকর্তা হাফিজুল হক। পরে প্রকল্পের মেয়াদ নিয়ে জানতে চাইলে হাফিজুল বলেন, 'স্যারের রুমে আছি, পরে কথা বলছি।'

তবে কাজ শেষ হবার আগে কেন চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে এর উত্তর পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মাবুবুর রহমান বলেন, 'বিল দেয়ার নিয়ম আছে। তবে ঠিকাদারের ২০ পার্সেন্ট জামানতের টাকা তো আটকে রাখা আছে। তিন শ্রমিক নিখোঁজের পর কোনো তদন্ত কমিটি, ঠিকাদার বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, এমনকি শ্রমিকদের সুরক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বা ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে কোনো সামগ্রী বিতরণ করা হয়নি।'

আহতাবস্থায় বেশ কয়েকজনকে গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় নিখোঁজ হন আতোয়ার (৩৬), রাজু (৪৫), ও রশিদ (৪০)। সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের পশ্চিম বাগুড়িয়া তালতলা গ্রামে এই তিন শ্রমিকের জন্য পাঁচদিন ধরে অপেক্ষা করছেন স্বজনরা।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম জানান, বাতাসের সঙ্গে নদীতে স্রোতের তীব্রতা ছিলো। এছাড়া ধারণ ক্ষমতার বেশি ব্লক নেয়ায় নৌকাটি ডুবে যায়।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুব আলম জানান, যারা নিখোঁজ হয়েছেন এখনো তাদের জীবিত কিংবা মৃত কোনোভাবেই পাওয়া যায়নি। আলামত না পাওয়া পর্যন্ত আইনগত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না তারা।