চুয়াডাঙ্গা ও আশপাশের অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র ভরসা সদর হাসপাতাল। তবে এই জায়গাই যেন পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, হলুদ কনটেইনারে হাসপাতালের ক্ষতিকারক, লাল কনটেইনারে ধারাল ও নীল কনটেইনারে তরল বর্জ্য রাখার কথা। কিন্তু এখানে দেখা যায় উল্টো চিত্র, এছাড়া খোলা রাখা হয়েছে সংক্রামক বর্জ্যের কনটেইনার। রোগীর স্বজনরা বলছেন, হাসপাতালে ভিতরেই বর্জ্য রাখায় রোগীর সঙ্গে এসে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
তাদের একজন বলেন, 'হাসপাতালে যখন আসি মুখে রুমাল দিয়ে আসতে হয়। ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। কার কাছে বিচার দিবো।'
সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও চিকিৎসা বর্জ্য অপসারণে যথাযথ নিয়ম মানছে না উপজেলার তিনটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ জেলার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য বিনষ্টের নিয়ম থাকলেও সপ্তাহ পার হলেও অপসারণ হয় না এসব বর্জ্য।
এছাড়া হাসপাতাল থেকে সৃষ্ট বর্জ্য যত্রতত্রভাবে ফেলা হচ্ছে ডাস্টবিনগুলোতে। অনেক সময় এসব বর্জ্য পশুপাখির মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ফলে পরিশোধন ছাড়াই এসব বর্জ্য মিশে যাচ্ছে জলাশয়ে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একজন বলেন, 'পৌরসভা থেকে এসে বর্জ্যগুলো নিয়ে যায় কিন্তু তারা বর্জ্য কোথায় ফেলে তা আমরা জানি না।'
চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অবশ্যই চিকিৎসা বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা ও জীবাণুমুক্ত করার নিজস্ব ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। কিন্তু জেলার সরকারি-বেসরকারি কোনো চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রেই সেই ব্যবস্থা নেই। এমনকি কোনো কর্তৃপক্ষই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছ থেকে কোনো ছাড়পত্রও নেয়নি। যদিও বিষয়টি মানতে নারাজ সিভিল সার্জন।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. সাজ্জাৎ হাসান বলেন, 'হাসপাতাল তার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য ফেলে।'
পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতি সপ্তাহে শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রায় দুই টন বর্জ্য নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশনে ফেলা হয়।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন বলেন, 'আমাদের নিজস্ব ডাম্পিংয়ে বর্জ্য ফেলা হয়ে থাকে।'
চিকিৎসা বর্জ্যের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন স্থানীয়রা। তাই এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর।
বিএমএ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি ডাক্তার মার্টিন হীরক চৌধুরী বলেন, 'পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়া ছাড়া কোনো ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স পাওয়ার কথা না। যদি পেয়ে থাকে এদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করবো।'
কাঠামো অনুযায়ী, বর্জ্য তদারকির দায়িত্ব জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের। তবে সমন্বয়হীনতার অভাবে জেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের একটিরও নেই নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম।