দেশে এখন
0

বন্যার পানিতে ভাসছে কুড়িগ্রামের বিস্তীর্ণ জনপদ

উজানের ঢলে ভরে ওঠা নদ-নদীর পানি ভাটির দিকে নেমে যায় ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে। সেই নদে পানি কমছে ধীরে ধীরে। মাঝখানে কুড়িগ্রামের বিস্তীর্ণ জনপদ বন্যার পানিতে ভাসছে। কমছে না দুর্ভোগ। বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ফসলের খেত সবই পানিতে নিমজ্জিত। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ও মাছ চাষ।

ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও জিঞ্জিরাম এই ৫ নদীসহ ১৬ নদীর জেলা কুড়িগ্রাম। এই নদ-নদীগুলোর পানি উপচে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে বন্যা। এতে জেলার ২ হাজার ২০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ৬৬২ বর্গ কিলোমিটার এলাকাই প্লাবিত হয়েছে।

চর, দ্বীপচর আর নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত ৩ শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি রয়েছেন ৪২ হাজার পরিবারের দেড় লক্ষাধিক মানুষ। বেশিরভাগ পরিবারের দিন চলে দিন মজুরির আয়ে। কাজে যেতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আর্থিকভাবে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানীয় জল ও গো-খাদ্য সংকটে দিন কাটছে তাদের। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ এমনকি পাকা সড়ক। নৌকা-ভেলা ছাড়া চলাচলের উপায় মিলছে না। সেই সাথে বাড়ছে নানা পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। এমন অবস্থায় মানুষ ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।

স্থানীয়দের একজন বলেন, 'আমার বাড়িতে পানি উঠেছে আজ ৬ দিন হলো আর স্কুলে আশ্রয় নিয়ে আছি ৪ দিন ধরে।' 

আরেকজন বলেন, 'পানি উঠায় কাজ বন্ধ। বেকার বসে  আছি।'

এদিকে, পানিতে তলিয়ে গেছে ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর ফসলের খেত। এছাড়াও ভেসে গেছে বদ্ধ জলাশয়সহ ১ হাজার ৬৯০টি পুকুরের ১১৭ টন মাছ এবং ২০ লাখের মতো পোনা। এতে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে জেলার মাছ চাষিদের।

মাছ চাষিদের একজন বলেন, 'আমার ৫টি পুকুরের মধ্যে ৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গিয়েছে।' 

পানি ঢোকায় ৪শ' ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান স্থগিত রয়েছে। এরমধ্যে ২৭৬টি প্রাথমিক এবং ১২৮টি মাধ্যমিক, মাদ্রাসা এবং কলেজ রয়েছে।

তবে, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বন্যার কারণে কিছু মৎস্য চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বাড়বে অভিমত জেলা মৎস্য কর্মকর্তার। আর কৃষি বিভাগ বলছে, বন্যা পরবর্তী চাষ সম্পর্কে কৃষকদের দেয়া হচ্ছে পরামর্শ।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, 'জেলার নদ নদীর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে। তিস্তা নদীর পানি অব্যাহত আছে।'

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে নাবি জাতের রোপা আমন চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছি।'

বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ।

জেলায় বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় এ পর্যন্ত ৩৯৭ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং ২২ হাজার ৬৯০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর