শতবর্ষী ওয়াপদা বাজার কালে কালে হয়েছে আগ্রাসী পদ্মার ভাঙনের শিকার। বার বার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও পদ্মার করাল গ্রাসে ঠিকানা বদলাতে হয়েছে।
তবে, এবার নতুন ঠিকানায় অনেকটাই নিরাপদ আছে এই বাজার। ভোর থেকেই ক্রেতা বিক্রেতাদের পদচারণায় থাকে জমজমাট। নড়িয়া-জাজিরা পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধ পাল্টে দিয়েছে এখানকার চিত্র। যেন ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এই জনপদের মানুষ। গতি পেয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি।
ওয়াপদা বাজারের মতো জেলার অন্তত ৯৩টি হাট-বাজার নদী তীর রক্ষা বাঁধের ফলে এখন অনেকটাই নিরাপদ রয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে পণ্য নিয়ে আসেন হাজারও মানুষ।
একজন ব্যবসায়ী বলেন, 'হাট অনেকবার নড়াচড়া হয়েছে। কিন্তু, এখানে নিয়ে আসার পর আর হাট সরাতে হয়নি। এখন ব্যবসা করে ভালো আছি। এই বাধ করে প্রায় ৮ থেকে ১০টি বাজার রক্ষা পেয়েছে।'
কীর্তিনাশার মতো পদ্মায় ভাঙন থামায় স্বস্তি ফিরেছে নদী তীরবর্তীদের মাঝে। তীর ঘেঁষে আবার গড়ছেন বসতি।
স্থানীয় একজন বলেন, 'আমরা এখান থেকে বাড়ি উঠে নিয়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিলাম। এই বাধ হওয়ার কারণে এখন সাহস করে আবার উঠিয়েছি।'
হাটবাজার আর বসতির মতো রক্ষা পেয়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। যেখানে নিশ্চিন্তে আবাদ করতে পারায় খুশি হয়েছেন কৃষকরা। বাঁধের সুফল মিলছে এখন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতেও।
নড়িয়া উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামরুল জমাদ্দার বলেন, 'আমরা এখন শঙ্কামুক্তভাবেই রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে নদীর ওপারে চরাঞ্চল থেকেও অনেকে সেবা নিতে আসছে।'
এদিকে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বাঁধ রক্ষাণাবেক্ষণ ও টেকসই করতে নানা উদ্যোগের কথা জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব বলেন, 'সবগুলো প্রকল্প শেষ হয়ে গেলে স্থানীয়রা শুধু নদী ভাঙন থেকেই রক্ষা পাবে না, এটি একটি বিনোদন কেন্দ্রেও পরিণত হবে। নদীর পাড়ের যারা দূরে চলে গেছে তারা আবার আগের জায়গায় চলে আসছে।'
জেলায় ৩ হাজার ৮২১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৫৮ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে রক্ষা পেয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার সম্পদ।