বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে ভাসছে বিস্তীর্ণ জনপদ। ঘরবাড়ি-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সারিয়াকান্দির ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এরইমধ্যে উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে । পানি বাড়তে থাকায় প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। সরকারি হিসেবে, বগুড়ায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দেড় লক্ষাধিক।
বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বাড়ছে। বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষ গুলো বিশুদ্ধ পানি, পয়:নিষ্কাশন আর খাদ্য সংকটে দিন পার করছেন। দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য।
বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান বলেন, 'আমি ত্রাণমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন ১০০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ২ লাখ টাকা ও ৫০ বান্ডিল টিন দেবেন আমাদের। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সরকার প্রস্তুত আছেন।'
উজানের পাহাড়ি ঢলে জামালপুরে যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৫০ হাজার মানুষ।
বন্যার পানির কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাড়ি-ঘরে পানি উঠায় গবাদি পশু নিয়ে কয়েকশ পরিবারের ঠাই হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর ও মাদারগঞ্জ উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি। দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি সড়কের একটি সেতুর সংযোগ সড়ক ও কাঠারবিল এলাকায় আঞ্চলিক সড়কের ৩০ মিটার অংশ বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে। এতে বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বন্যার্ত মানুষের জন্য ৩০০ টন চাল ও ৩ হাজার ৪শ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ১১টি মেডিকেল টিম।
সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে কয়েকটির বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও ভয়াবহতা অবস্থা ভারতের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার। ৩য় দফার বন্যায় সুরমা-কুশিয়ারার ৪টি বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করছে ঢলের পানি।
বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতিতে দুর্ভোগে দিন পার করছেন ৮৭টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। ঘর-বাড়ির পাশাপাশি প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রও। অনেকের ঠাঁই হয়েছে প্রধান সড়ক ও উঁচু স্থানে।
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে কৈয়ার ঢালা স্লুইসগেট ভেঙে প্রবল বেগে হাওরে ঢুকছে ঢলের পানি। এরই মধ্যে পানি ঢুকতে শুরু করেছে লোকালয়ে। তলিয়ে গেছে নওগাঁ, নোয়াহাটি, মাধবপাশা ও জলসুখাসহ কয়েকটি গ্রামের রাস্তাঘাট। কুশিয়ারা নদীতে পানি বৃদ্ধি এখনও অব্যাহত রয়েছে। আজমিরীগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল না থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পানি সরে যাওয়ার সাথে সাথে বেড়িয়ে আসছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট। যানবাহন দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাই যেন দুষ্কর। এতে চরম ভোগান্তিতে দিন পার করছেন স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জে সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটাসহ সকল নদ- নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।