দেশে এখন
0

ঢাকার ৩০ হাজার রেস্তোরাঁর বেশিরভাগের সনদ নেই

রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৩০ হাজার রেস্তোরাঁ রয়েছে। তবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন বলছে, তাদের থেকে লাইসেন্স নেয়া রেস্তোরাঁ মাত্র ২ হাজার ১৩৬টি। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্যমতে, সরকারের সব সংস্থার প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিয়ে দুই সিটি এলাকায় ব্যবসা করছে মাত্র ১২৮টি রেস্তোরাঁ।

ঘটনার সূত্রপাত গত ২৯ ফেব্রুয়ারি, বেইলি রোডের 'গ্রিন কোজি কটেজ' ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এরপরই প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। রাজউক, সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে ফায়ার সার্ভিস; সব সরকারি সংস্থা রাজধানীতে অবৈধ রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে অভিযান চালায়।

রেস্তোরাঁর সংখ্যার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে লাইসেন্স নেয়া রেস্তোরাঁর সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৩১ টি। আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) এই সংখ্যা ১ হাজার ১০৫টি।

অন্যদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্য বলছে, সরকারের সব সংস্থার প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিয়ে মাত্র ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছে। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ১২৮টি রেস্তোরাঁ। তাহলে রাজধানীর বাকি রেস্তোরাঁগুলো কীভাবে চলছে, জানতে চাইলে এক সংস্থা অন্য সংস্থার ঘাড়ে দায় চাপায়?

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নকশা অনুমোদনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একটি বিভাগ আছে। সেই বিভাগ যদি ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয় তাহলে সেটি সুন্দর ও সহায়ক হবে।’

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘হুট করে কয়দিন চলার পর আবার থেমে যাবে। আসলে আমাদের সেই ধরনের সক্ষমতা নেই। শুধু সিটি কর্পোরেশনই না, কোনো সংস্থার সেই সক্ষমতা নেই। আর আমি যদি বন্ধ করতে চাই, তাহলে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।’

রেস্তোরাঁ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, অবৈধ রেস্তোরাঁর কারণে বৈধ ব্যবসায়ীদেরকে নানা সময় হয়রানির শিকার হতে হয়। আবার সরকারি দপ্তরগুলো থেকে লাইসেন্সসহ অন্যান্য অনুমতিপত্র নেয়ার প্রক্রিয়াও জটিল। তাই রেস্তোরাঁ খোলার প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি তাদের।

এদিকে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, জনবহুল এই শহরে উন্মুক্ত জায়গা, খেলার মাঠ এবং গণপরিসর নেই। তাই মানুষ স্বস্তির জন্য রেস্তোরাঁকে বেছে নেয়। ফলে অবশ্যই রেস্তোরাঁগুলো নিরাপদ হতে হবে এবং এগুলোকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ‘ঘটনার পর অভিযান চালানো কোনো টেকসই সমাধান হতে পারে না। আর ঢাকা শহরে যদি ব্যবসা করতে চান, তাহলে অবশ্যই নিবন্ধন থাকা প্রয়োজন। আর জনবহুল এই শহরে উন্মুক্ত জায়গা, খেলার মাঠ ও গণপরিসর না থাকায় মানুষ স্বস্তির জন্য রেস্তোরাঁ বেছে নেয়। ফলে অবশ্যই রেস্তোরাঁগুলো নিরাপদ হতে হবে এবং সেগুলোকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।’

শুধু নগরবাসীর বিনোদনের জায়গা হিসেবে নয় বরং দেশের জিডিপিতেও অবদান রাখছে রেস্তোরাঁ। ২০২১ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপ থেকে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের জিডিপিতে রেস্তোরাঁগুলো প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা মূল্য সংযোজন করেছে।