দেশে এখন

নাগরিক সুবিধা থেকে এখনও বঞ্চিত ডিএনসিসির বাসিন্দারা

২০২১-২২ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়নকাজ শুরু হয়। এজন্য পাস হওয়া ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার অর্ধেকই বরাদ্দ জমি অধিগ্রহণে। তবে নানা কারণে সেই টাকা ছাড় দেয়া বন্ধ আছে। আর বাকি টাকার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৭৭৫ কোটি টাকা হাতে পেয়েছে ডিএনসিসি।

২০১৬ সালে সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হলেও এখনও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ঢাকা উত্তর সিটির ১৮টি নতুন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এখানকার উন্নয়নকাজের জন্য ২০২০ সালের জুলাই মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়।

বাজেট পাস হওয়ার পর ২০২১-২২ অর্থবছরে নতুন ওয়ার্ডগুলোয় উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। অনুমোদিত টাকার মধ্যে ১ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয় জমি অধিগ্রহণে। আর উন্নয়নকাজের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় জমি অধিগ্রহণের টাকা ছাড় দেয়া বন্ধ আছে। ফলে গতি হারাচ্ছে নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নকাজ ।

স্থানীয় একজন বলেন, 'অসুবিধা বেড়েছে, কিন্তু কোনো সুবিধা আমরা পাইনি। যাদের বাসা দূরে তাদের যেতে অনেক কষ্ট হয়। কাছে যাদের বাসা, তাদেরও রিক্সা দিতে হয়। রিক্সা ভাড়া অনেক বেশি।'

ডিএনসিসির নতুন ওয়ার্ডের একটি দক্ষিণ খান। এই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমেও সড়কের বেশির ভাগ স্থানে পানি জমে আছে। পুরো সড়ক খানাখন্দে ভরা। কোথাও কোথাও মাটির রাস্তা। এসব সড়কে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে যানবাহন। ডিএনসিসির অন্যান্য নতুন ওয়ার্ডের রাস্তাঘাটেরও একই দশা।

ডিএনসিসির রাস্তার বেহাল দশা। ছবি: এখন টিভি

স্থানীয় একজন বলেন, 'বৃষ্টি হইলে তো এখানে আর ভাড়াটিয়া থাকে না। যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন, তাদের ভাড়াটিয়া চলে গেলে নিরুপায় হয়ে পড়ে। নর্দমার পানি, কলকারখানার পানি, বাথরুমের পানি রাস্তায় এসে কাঁদা হয়।’

ডিএনসিসি বলছে, উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত ৩ ধাপে ৭৭৫ কোটি টাকা হাতে পেয়েছে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছর আরও ১৭৫ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। সেই টাকায় জুন মাস পর্যন্ত ৯৫০ কোটি টাকার কাজ করা হবে। এছাড়া নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের জন্য সিটি কর্পোরেশন নিজ তাগিদে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, 'ইনফ্রাচটাকচারের কিছু কাজ শুরু হয়েছে। এটা প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার একটা প্রজেক্ট। এ প্রজেক্টের মধ্যে দিয়ে আমাদের রাস্তা তৈরি হচ্ছে। নর্দমা তৈরি হচ্ছে এবং এলইডি লাইট লাগানো হচ্ছে।'

এদিকে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, নতুন ওয়ার্ডে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে প্রশস্ত সড়ক, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, শরীরচর্চা কেন্দ্র, খেলার মাঠ ও পার্কসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা। অথচ সেখানে এসবের কিছুই নেই।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ বলেন, 'মানুষের চাহিদার অনুপাতে নাগরি সুবিধাগুলোকে প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তাবের পাশাপাশি যা দরকার তা হচ্ছে ওগুলোর বাস্তবায়ন। সময় যত গড়াব সাথে সাথে এই চাহিদাগুলো আরও জটিল আকার ধারণ করবে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ও বাড়তে থাকবে।'

নতুন ওয়ার্ডগুলো সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়ার পর দুইবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচন হয়েছে। তবে তাতে এতটুকুও সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি নাগরিকদের। ভোগান্তি রয়ে গেছে পরিবহন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর