বিদায় পঁচিশ; অভিবাদন ২০২৬

বিদায় পঁচিশ; অভিবাদন ২০২৬
বিদায় পঁচিশ; অভিবাদন ২০২৬ | ছবি: এখন টিভি
2

সময়ের পরিক্রমায় বিদায় নিলো আরও একটি বছর। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে প্রকৃতি ও জনজীবনে আগমন ঘটলো নতুন বছরের। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আনন্দ-বেদনার অম্লমধুর স্মৃতি পেছনে ফেলে নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা আর আগামীর অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু হলো ২০২৬ সাল। আজ (বৃহস্পতিবার, ১ জানুয়ারি) ইংরেজি নববর্ষ। ২০২৫-এর বছরজুড়ে নানা ঘটনায় চড়াই-উতরাই থাকলেও সাধারণ মানুষের মাঝে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। নতুন বছরকে জানাচ্ছে অভিবাদন।

আন্তর্জাতিক সময়ের পার্থক্যের কারণে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ২০২৬ সালকে স্বাগত জানিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র কিরিবাতি। এরপর বর্ণাঢ্য আতশবাজির মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। সিডনি হারবার ব্রিজে হাজারও মানুষের উল্লাস আর আলোকসজ্জা বিশ্ববাসীকে জানান দিচ্ছে এক নতুন শুরুর কথা।

বিদায়ী বছর ২০২৫ ছিল বাংলাদেশের জন্য পুনর্গঠন আর পরিবর্তনের বছর। রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় সব পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে নানা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বিশেষ করে বছরের একেবারে শেষ মুহূর্তে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রয়াণে দেশজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। তবে শোককে শক্তিতে পরিণত করে নতুন দিনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় তরুণ প্রজন্মের চোখে।

উচ্ছ্বাসে ভাসছে তারুণ্য, ২০২৬ সালকে অভিবাদন জানাতে ঢাকাসহ দেশজুড়ে নেয়া হয়েছে প্রস্তুতি। নতুন বছরকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যদিও শোকের আবহ থাকায় বাংলাদেশে বড় ধরনের আড়ম্বরপূর্ণ উৎসব কিছুটা সীমিত রয়েছে। তবুও ঘরোয়াভাবে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরকে শুভেচ্ছায় সিক্ত করছেন।

জননিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিন রাষ্ট্রীয় শোক চলাকালে রাজধানী ঢাকায় সকল ধরনের আতশবাজি ও র‌্যালি নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি।

তবে নতুন বছর বরণে রাজধানীর কিছু কিছু হোটেল ও ক্লাব বর্ণিল আলোকসজ্জায় সেজেছে। রাখা হয়েছে নানা মাত্রিক আয়োজন। সব বাধা পেরিয়ে ২০২৬ সাল সবার জীবনে বয়ে আনুক শান্তি, সমৃদ্ধি আর সম্প্রীতি—এটাই প্রার্থনা।

নতুন বছরের প্রত্যাশা ২০২৬ সালকে ঘিরে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন দেখছে দেশবাসী।

নতুন বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যে নির্বাচন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণমূলক আর উৎসবমুখর হবে বলে প্রত্যাশা করছে পুরো জাতি।

নতুন বছর উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ও বিদেশে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিসহ সমগ্র বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এই শুভেচ্ছা জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন বছরে আরও জোরদার হোক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। নতুন বছর সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। সবাইকে শুভ নববর্ষ। নববর্ষ মানেই নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা ও নতুন সম্ভাবনার সূচনা। নতুন বছরে সকল চ্যালেঞ্জ একসাথে মোকাবিলা করে একটি সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।’

কেমন ছিলো ২০২৫

২০২৫ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে রূপান্তর ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের বছর হিসেবে উল্লেখ থাকবে। ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী প্রভাব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের নানামুখী উদ্যোগই ছিল এ বছরের মূল কেন্দ্রবিন্দু।

পঁচিশের উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা—

খালেদা জিয়ার প্রয়াণ: বছরের শেষ দিকে ৩০ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি যুগের অবসান ঘটে।

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন: দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে গত ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে আসেন। রাজধানীর ৩০০ ফিটে তাকে বিশাল গণসংবর্ধনা দেয়া হয়।

ওসমান হাদি খুন: ২০২৫ সালে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ ছিল অত্যন্ত আলোচিত ঘটনা। গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় হাদি হামলার শিকার হন। গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে হাদি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ত্রয়োদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা: ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নে গণভোটের আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। গত ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে তিনি এ তফসিল ঘোষণা করেন।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ: গত ১৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি একটি বিশেষ আদেশ জারি করেন, যার মাধ্যমে এ সনদকে আইনি ভিত্তি দেয়া হয়।

গণভোট: ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের দিনই এ সনদের প্রস্তাবগুলোর ওপর একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে এ সংস্কারগুলো সংবিধানে স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক হবে। গণভোটে জয়ী হলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ‘সংবিধান সংস্কার কাউন্সিল’ গঠন করা হবে, যারা ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধানের পূর্ণাঙ্গ সংশোধন সম্পন্ন করবে।

শেখ হাসিনার বিচার: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

উত্তরা ট্রাজেডি: ২০২৫ সালের ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরায় ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনাটি দেশের ইতিহাসের অন্যতম মর্মান্তিক এবং হৃদয়বিদারক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এটি ছিল সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনায় মোট ৩৬ জন প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে ছিল ৩২ জন শিশু শিক্ষার্থী, ৩ জন শিক্ষক এবং বিমানটির পাইলট।

মিরপুরের পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ড: ১৪ অক্টোবর মিরপুরের একটি তৈরি পোশাক কারখানা ও কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জন প্রাণ হারান।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন: ২০২৫ সালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় চমক ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টির আত্মপ্রকাশ। জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা বছরের গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন এই রাজনৈতিক দল গঠন করেন।

আসু