রেলওয়ের ভাষায় ‘পন্টেজ চার্জ’ হলো রেলপথের মধ্যে অবস্থিত সেতু বা অনুরূপ অবকাঠামোর ওপর দিয়ে যাওয়ার জন্য ভাড়ার ওপর আরোপিত একটি অতিরিক্ত মাশুল। নতুন এই হিসাব অনুযায়ী, ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতুকে আড়াই কিলোমিটার পথ হিসেবে গণনা করা হবে। ফলে মূল দূরত্বের হিসাব বাড়িয়ে ভাড়া নির্ধারণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
রেলের আয় বাড়াতে গত মে মাসে এই ‘পন্টেজ চার্জ’ পুনর্নির্ধারণের মাধ্যমে ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। পরবর্তী যাচাই-বাছাই ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে ডিসেম্বর মাসে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ নিয়ে গঠিত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সাধারণ ট্রেন ও আন্তনগর ট্রেনের জন্য আলাদা আলাদাভাবে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করেছে।
গত ২৫ মে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের উপস্থিতিতে রেলওয়ের আয় বৃদ্ধি ও ব্যয় কমানো নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সরাসরি টিকিটের মূল্য না বাড়িয়ে ‘পন্টেজ চার্জ’ সামঞ্জস্যের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগ কাজ শুরু করে। উল্লেখ্য, রেলওয়ে সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ট্রেন ভাড়া বাড়িয়েছিল।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত ২৫ নভেম্বর রেলের উপপরিচালক (মার্কেটিং) স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ২০ ডিসেম্বর থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ৮ ডিসেম্বর সহকারী প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা বিষয়টি জনস্বার্থে প্রচারের জন্য অনুমোদন দেন।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ছয়টি প্রধান রুটে মোট ১১টি সেতুতে এই নতুন পন্টেজ চার্জ আরোপ করা হচ্ছে। রুটগুলো হলো: ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-সিলেট, চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-জামালপুর ও ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট: মেইল ট্রেনের ভাড়া ১৫ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকা, শোভন চেয়ার ৪৫০ টাকা এবং স্নিগ্ধা টিকিট ৮৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিরতিহীন ট্রেনে (সুবর্ণ/সোনার বাংলা) স্নিগ্ধার ভাড়া বেড়ে হবে ৯৪৩ টাকা। কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেসে এসি বার্থের ভাড়া সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা বেড়ে হবে ২,৬৫৬ টাকা।
ঢাকা-সিলেট রুট: মেইল ট্রেনের ভাড়া ১৪০ টাকা, স্নিগ্ধা ৭৮৮ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ১,৪৬৫ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-সিলেট রুট: স্নিগ্ধার ভাড়া ৯০৯ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ১,৬৭৮ টাকা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-জামালপুর রুট: মেইল ট্রেনের ভাড়া ১৮৫ টাকা, স্নিগ্ধা ১,০৪১ টাকা এবং এসি সিটের ভাড়া ১,২৫৪ টাকা হবে।
ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুট: এ রুটে মেইল ট্রেনের ভাড়া বাড়েনি। তবে কমিউটার ট্রেনের ভাড়া ৫ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ৯২৪ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে পুরনো ও বড় সেতুগুলোর (১০০ মিটারের বেশি) রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটাতেই পন্টেজ চার্জ সমন্বয় করে এই ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। সব রুটেই যে ভাড়া বাড়ছে, তাও নয়। যেখানে বাড়ছে, সেটাও খুব বেশি নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।





