প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন— একটি বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, জনকল্যাণমুখী ও স্বাধীন রাষ্ট্র— আমরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘এখন থেকে আমরা বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই, যাতে এ দেশের জনগণই যেন সব ক্ষমতার উৎস হয়ে ওঠে এবং বাংলাদেশ মানবিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে স্বীকৃতি পায়।’
এসময় তিনি মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেয়া শহিদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা বীর জনগণের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এ দিনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা এবং বাঙালি জনগণ সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ পরিচালনা করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘এ ঐতিহাসিক সমন্বিত অভিযান আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ মানুষের অতুলনীয় ত্যাগের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।’
ড. ইউনূস সব শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এসময় তিনি ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদেরও স্মরণ করেন।
আরও পড়ুন:
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধে অর্জিত বিজয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকে বাঙালি সেনারা সেনানিবাস ত্যাগ করে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। একইসঙ্গে আমাদের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-জনতা— সাধারণ মানুষ যার যা ছিল তাই নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন। এভাবে যুদ্ধটি একটি সর্বাত্মক জনযুদ্ধে রূপ নেয়।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাংগঠনিক রূপ দেয়ার জন্য এক পর্যায়ে যুদ্ধরত সব বাহিনীকে “বাংলাদেশ ফোর্সেস” নামে একীভূত করা হয় এবং সমগ্র দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে অসামান্য সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালিত হয়।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে কর্মরত বাংলাদেশি সাবমেরিনার ও নাবিকদের সমন্বয়ে গঠিত নৌকমান্ডো দল “অপারেশন জ্যাকপট” নামে দুঃসাহসী অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন নদীবন্দরে খাদ্য ও রসদবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত “কিলোফ্লাইট” চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সফল হামলা চালায়। এসব দুঃসাহসী অভিযান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদানকে সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত হয়। আজ সেই দিন। এ দিনে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়ে আমরা অনুপ্রাণিত হই।’
আরও পড়ুন:
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিক সম্মান প্রদানের উদ্যোগ নেয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের বিভিন্ন কার্যক্রম চালু আছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। সময়ের আবর্তে অধিকাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা বয়সজনিত কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছেন। তাদের প্রতি আনুষ্ঠানিক সম্মান প্রদর্শনের জন্য যে উদ্যোগ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী গ্রহণ করে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’
নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তরুণ সমাজকে সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মেধাভিত্তিক সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটিয়ে দেশগঠনে অবদান রাখতে সক্ষম করতে হবে। জুলাই ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত ও জীবিত ছাত্র-জনতার প্রতি আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকব যেন তাদের দেয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে গণতান্ত্রিক উত্তরণের এক দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করতে পারি।’





