ঘন জঙ্গল আর জলাশয়ে ঘেরা প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ। বন্যপ্রাণীর হানা, ভূমিধস আর বন্যা, কাদামাটিতে দেবে যাওয়া কিংবা সন্ত্রাসীদের কাছে মুক্তিপণের দাবিতে জিম্মি হওয়া, এই পথ পাড়ি দিতে অনেককেই ভোগ করতে হয় এমন সব নরক যন্ত্রণা।
যদিও, শেষ পর্যন্ত টিকে যান হাতে গোনা কয়েকজন। যাদের গন্তব্য, যুক্তরাষ্ট্র নয়তো কানাডা। কলম্বিয়াকে পানামার সঙ্গে যুক্ত করা দুই মহাদেশের মধ্যে এই স্থলপথ গেল কয়েক বছরে পরিণত হয়েছে অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক রুটে।
প্যান আমেরিকান হাইওয়ের মধ্যে আলাস্কা থেকে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত বিস্তৃত মহাসড়কের ছোট অংশ এই ড্যারিয়েন গ্যাপ, যদিও এটি কোন সড়ক নয়। যারা এই ড্যারিয়েন গ্যাপ পাড়ি দিতে যায়, তাদের মুখোমুখি হতে হয় খাড়া পর্বত, কর্দমাক্ত জলাভূমি, স্রোতস্বিনী নদী, আর বিপজ্জনক বন্যপ্রাণীর । বৃষ্টির দিনে এই পথ হয়ে যায় আরও বিপজ্জনক। এই জঙ্গল বিষাক্ত সাপ, পোকামাকড় আর জাগুয়ারে ভরা। রয়েছে কুমির আর মশার আতঙ্কও।
এরমধ্যে আরও বড় ঝুঁকি, যে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ড্যারিয়েন গ্যাপ নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের নিয়ে। মাদক চোরাচালানের এই রুটে অভিবাসন প্রত্যাশীরা ডাকাতি আর নির্যাতনের শিকারও হন। কিন্তু যে অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র যেতে মরিয়া, তাদের জন্য এই পথ এড়ানো কঠিন। দফায় দফায় সন্ত্রাসী আর মানব পাচারকারীকের দিতে হয় শত শত ডলার। কারণ মোবাইল ছাড়া, একমাত্র এই গাইডরাই ভয়ংকর পথ পাড়ি দেয়ার ক্ষেত্রে হয়ে পড়েন একমাত্র ভরসার জায়গা।
ডাঙ্কি রুট হিসেবে পরিচিত এই পথে এশিয়ানরা প্রথমে মধ্য আমেরিকার দেশ পানামা, কোস্টা রিকা, এল সালভাদোর আর গুয়াতেমালাতে যায়, যেখানে ভিসা পাওয়া সহজ। এরপর গন্তব্য মেক্সিকো, সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র। ভয়ংকর এই রুট পাড়ি দিতে মানবপাচারকারীদের সহযোগিতা নেয় অনেকেই, দিতে হয় হাজার হাজার ডলার।
কলোম্বিয়া সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এই অভিবাসন ব্যবসা থেকে প্রতিবছর গাল্ফ ক্ল্যান একাই ৩ কোটি ডলার আয় করে। দশকের পর দশক ধরে গাল্ফ ক্ল্যান হিসেবে পরিচিত কলোম্বিয়ার সন্ত্রাসীরা এই রুট দিয়ে মাদক পাচার করে।
সাম্প্রতিক সময়ে এই রুট পরিণত হয়েছে বিশ্বের বিপজ্জনক অভিবাসন রুটে। প্রতিবছর হাজার হাজার অভিবাসী ঘন এই জঙ্গলের পথ পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে উন্নত জীবনের খোঁজে। কিন্তু যাত্রাপথে অনেককেই দিতে হয় জীবন। এ পর্যন্ত ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে ভয়ংকর এই জঙ্গল পার হতে গিয়ে, সেই সংখ্যাটাও অজানা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে 'ড্যারিয়েন গ্যাপ' দিয়ে অভিবাসীদের দেশ ছাড়ার হার আকাশ ছুঁয়েছে। ২০২৩ সালে ৫ লাখের বেশি অভিবাসী সফলভাবে ভয়ংকর এই পথ পাড়ি দিয়েছেন। ২০২২ সালের তুলনায় যা দ্বিগুণ। সবশেষ ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ৩ লাখের উপরে। অথচ এক দশক আগেও বছরে কয়েক হাজার মানুষ এই ঝুঁকি নিতো। বিপজ্জনক এই রুট পাড়ি দেয়ার ঝুঁকি নেয় ভেনেজুয়েলা, হাইতি, ইকুয়েডর, পাকিস্তান, ভারত এমনকি বাংলাদেশের অভিবাসন প্রত্যাশীরাও। ৭ থেকে ১৫ দিনের এই যাত্রায় অনেকেই জীবদ্দশায় দেখে ফেলে নরক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেয়ার আগেই তার উপদেষ্টা টম হোম্যান জানিয়েছেন, এই প্রশাসন ড্যারিয়েন গ্যাপ বন্ধ করে দিতে পারে। তিনি বলেন, দেশের নিরাপত্তার জন্য এই পথ বন্ধ করে দেয়া উচিত।