ট্রাম্পের গাজা পুনর্গঠন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান সৌদি আরবের

উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

গাজার পুনর্গঠন নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি ট্রাম্পের অদ্ভুত ভাবনা। যা একবিংশ শতাব্দীর নতুন উপনিবেশবাদ। যদিও ট্রাম্পের প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব।

ইসরাইলের অতি-ডানপন্থি সরকার দীর্ঘদিন ধরেই অধিকৃত অঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে ইহুদি বসতি স্থাপনের চেষ্টা করে আসছে। এবার ইসরাইলিদের সঙ্গে তাল মেলালেন নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে জর্ডান, মিশর ও অন্য আরব দেশে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরে ফের ঘোষণা দিলেন।

তবে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে, নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনসংখ্যাকে জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রচেষ্টা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানে এটি ট্রাম্পের অদ্ভুত ভাবনা। ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে সাম্রাজ্যবাদীর প্রতিফলন দেখিয়ে চলেছেন বলেও অভিযোগ অনেকের। পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড ও কানাডার পর এবার গাজা দখলের ঘোষণা দিলেন তিনি। যা একবিংশ শতাব্দীর নতুন উপনিবেশবাদ বলেও মনে করছেন অনেকে।

ট্রাম্পের প্রস্তাবে মুখে হাসি ফুটে উঠেছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাসের সবচেয়ে জোরালো মার্কিন হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন প্রস্তাবকে ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূল হিসেবে বিবেচনা করে এরইমধ্যে তা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন আরব নেতারা।

এদিকে সৌদি আরব বলেছে, ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন না করলে ইসরাইলের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করবে না তারা। ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যের পর এক বিবৃতিতে এ কথা জানায় সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ট্রাম্পের এমন প্রস্তাব জনমনেও প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের মুখেও পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া, চলমান যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি প্রক্রিয়ায়ও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বেঞ্জামিন র‍্যাড বলেন, 'আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের অন্য জায়গায় স্থানান্তর করতে পারে না। তবে প্রশ্ন হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায় অন্য দেশ বা জাতি হস্তক্ষেপ করবে কিনা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জাতিসংঘ ও আরব রাষ্ট্র থেকে বাধা আসবে। গাজা দখল করে নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করার চেষ্টা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।'

দ্বি-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। এদিকে, মার্কিন কর্মকর্তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরামর্শকে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে কীভাবে গাজার পুনর্বাসন হবে তা বাস্তবতার সাথে মিল রেখে এগোনোর আহ্বান জানান তারা।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেন, 'গাজার পুনর্গঠন কীভাবে হবে এবং তা কতটুকু বাস্তবসম্মত, সেটি সবার আগে দেখতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা দিতে হবে। আমরা সবাই একটা অনির্দিষ্ট সময়ের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের ধারণা ১০ থেকে ১৫ বছরও লাগতে পারে।'

মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, 'ফিলিস্তিনিরা কোথায় যাবে, সেটা একটি বড় সমস্যা। সবার আগে এই সংকটের সমাধান করতে হবে। আর এটাই আমরা গুরুত্বের সঙ্গে করবো। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই কাজের জন্যই আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন।'

যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বার্তা আসেনি। গাজায় এখনও ৭০ জনেরও বেশি জিম্মি রয়েছে। তাদের মুক্তির জন্য ইসরাইলিরা এখন তাকিয়ে আছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকেই।

এসএস