১৯৭৬ সাল থেকে জনশক্তি রপ্তানি শুরু করে বাংলাদেশ। আর মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সবচেয়ে আকষর্ণীয় কর্মস্থল ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। শুরুর দিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে কর্মীদের গন্তব্য ছিল আবুধাবি। যাদের অধিকাংশই ছিলেন বাগান কর্মী ও নির্মাণ শ্রমিক।
এখনও আবুধাবির প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাগানে দেখা যায় বাংলাদেশিদের। শহর থেকে দূরে আল বাহিয়া, শাহামা, রাহাবাসহ বেশকিছু অঞ্চলে বাগানকর্মী হিসেবে কাজ করছেন তারা। দিনে প্রায় সাত ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে কর্মীদের মাসিক বেতন এক থেকে দেড় হাজার দিরহাম।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে একজন বলেন, ‘প্রতিমাসে আমাদের বেতন দিয়ে দেয়। আমরা যে টাকা পয়সা ইনকাম করি সব ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাই। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের পরিবারও খুব ভালোমতো চলে।’
শহরের ভেতর কিংবা বাইরে নির্মাণ কাজে বাংলাদেশি কর্মীদের ওপর ভরসা করেন অনেকে। নতুন ভবন তৈরি, অবকাঠামোগত সংস্কার ছাড়াও অনেক সময় সুউচ্চ অট্টালিকায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে দেখা যায় তাদের।
প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘জুন থেকে জুলাই মাসে গরম বেশি পড়ে। অনেক তাপমাত্রা সহ্য করে কাজ করতে হয়।’
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের ৫টি দেশে পাড়ি দিয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি। বিপরীতে চলতি অর্থবছরেও প্রতি মাসেই প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল আগের মাসের চেয়ে বেশি। দীর্ঘদিন ধরে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখছেন প্রবাসীরা।
আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এই মুহূর্তে অর্থনীতির সবচেয়ে শক্তিশালী মেরুদন্ড হয়ে আছে আমাদের প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। প্রবাসীরা টাকা পাঠিয়েছে বলেই আজকে আমরা কত বড় বড় ঋণ শোধ করতে পারছি। এ ছাড়া আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।’
বর্তমানে অগ্রাধিকারভিত্তিতে দক্ষ শ্রমিক নেয়ার দিকে ঝুঁকছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে ভিনদেশিদের সঙ্গে সমতা ফেরাতে তাই দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিকের বিকল্প দেখছেন না প্রবাসীরা। শ্রমিক পাঠানোর আগেই তাই ভাষাগত জ্ঞান ও ন্যূনতম প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে দেশে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে সংখ্যা নয় বরং বিবেচনা করতে হবে দক্ষতা। রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে ব্যবস্থা করতে হবে কর্মীদের জন্য বৈশ্বিক চাহিদা নির্ভর প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ।