যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অরলিন্সে বর্ষবরণ উদযাপনের ভিড়ে ট্রাক নিয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনার একদিন পরও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে গোটা শহরে। এ ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন হামলাকারী নিহত হয়েছেন বলে এরইমধ্যে নিশ্চিত করেছে এফবিআই। এছাড়াও, এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য সহ আহতদের পাঁচটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ভয়াবহ ওই ঘটনা এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের।
বুধবার (১ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় রাত সোয়া তিনটার দিকে নিউ অরলিন্সের বারবন স্ট্রিটের ভয়াবহ হামলার ঘটনার ২৪ ঘণ্টা না যেতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে এফবিআই। ঘটনার আগে হামলাকারীর প্রকাশিত একটি ভিডিও সামনে এনেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।
এই ভিডিও থেকে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে এফবিআই জানিয়েছে, নিহত হামলাকারীর নাম শামসুদ্দিন জব্বার। ৪২ বছর বয়সী এই মার্কিন নাগরিক সাবেক সেনা সদস্য এবং টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা। তিনি ২০০৭ সাল থেকে মার্কিন সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালে তিনি আর্মি রিজার্ভ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। পাশাপাশি উগ্রবাদী সংগঠনের সাথে তার যোগাযোগ ছিল বলেও ধারণা করা হচ্ছে। নিউ অরলিন্সের হামলায় ব্যবহৃত গড়ি থেকে আইএস এর পতাকা পাওয়ার পর এ নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিত তদন্ত কর্মকর্তারা।
এ অবস্থায় হামলাকারী কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত কী-না বা তিনি অন্য কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কী-না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানায় এফবিআই। এছাড়াও, ঘটনাস্থল উন্নত বিস্ফোরক ডিভাইস উদ্ধারের পর বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্তকারীরা পর্যালোচনা করে বোঝার চেষ্টা করছেন যে কেউ এই ডিভাইসগুলো স্থাপন করতে সাহায্য করেছে কিনা।
প্রাণঘাতী ও নৃশংস এ হামলাকে ঘৃণ্য ঘটনা উল্লেখ করে হতাহতদের পরিবারের প্রতি শোক জানিয়ে এফবিআই-এর কাছ থেকে পাওয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, 'এফবিআইও আমাকে জানিয়েছে যে হামলার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে, আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে হত্যাকাণ্ড চালানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। তার গাড়িতেও আইএস এর পতাকা পাওয়া গেছে। যেখানে তিনি এই হামলা চালিয়েছেন তার কাছাকাছি বিস্ফোরকও পাওয়া গেছে।'
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া পোস্টে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রম্প। এমনকি জো বাইডেন প্রশাসনের কঠোর সমালোচনাও করেছেন তিনি।
নিউ অরলিন্সে এর আগেও নববর্ষ এবং অন্যান্য উৎসবে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে একটি প্যারেডে গুলিবর্ষণে দুইজন নিহত এবং ১০ জন আহত হন। এছাড়া, ২০১৭ সালে মাতাল অবস্থায় এক ব্যক্তি মার্দি গ্রাস প্যারেডে পথচারীদের ওপর ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে ২০ জনের বেশি মানুষকে আহত করেছিল।