দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ। ইতোমধ্যে গাজা থেকে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশী লেবাননে। শঙ্কা রয়েছে ইসরাইলের সঙ্গে আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়াতে পারে ইরানও। মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তাপ ছড়িয়েছে মার্কিন রাজনীতিতেও।
ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোয় হামলা চালানো উচিত ইসরাইলের। তেল আবিব এমন পদক্ষেপ নিবে বলে নর্থ ক্যারোলাইনায় নির্বাচনী সভায় আশা প্রকাশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরাইলকে ইরানের পারমাণবিক ও জ্বালানি স্থাপনায় হামলা না করতে বাইডেনের আহ্বানের কড়া সমালোচনাও করেছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, 'আমাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে হবে। কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাইডেনের উত্তর হওয়া উচিত ছিল আগে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালাও। বাকিটা আমরা সামলে নিবো। এবং ইসরাইলের এমনটাই করা উচিত।'
অভিবাসীর ঢল আটকাতে বাইডেন প্রশাসন শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ ট্রাম্পের। জানান, বর্তমান সরকার অভিবাসীদের পেছনে ব্যয় করছে বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে দেশজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ১৩ হাজারের বেশি হত্যাকারী।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'তারা অভিবাসীদের জন্য বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। যাদের মধ্যে অনেকে হত্যা ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। বাইডেনের সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে দেশে প্রবেশ করেছে ১৩ হাজার ৯৯ জন খুনি। আমাদের বিলিয়ন ডলার কর এদের পেছনে খরচ করা হচ্ছে।'
যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরে বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থতা ক্ষুব্ধ করে তুলেছে মার্কিন মুসলিমদের। তাই নির্বাচনের আগে ভোটারদের মন জয়ের কৌশল হিসেবে আরব আমেরিকান ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কামালা হ্যারিস। মিশিগানে আধা ঘণ্টার বৈঠকে আলোচনা করা হয় যুদ্ধ বন্ধের কৌশল নিয়ে।
এরপর অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্টে এক জনসভায় অংশ নেন কামালা। এসময় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অভিযোগ করেন, ট্রাম্পের শাসনামলে শিল্পখাত থেকে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় দুই লাখ কর্মী। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেন কামালা হ্যারিস।
তিনি বলেন, 'তিনি অনেক বড় প্রতিশ্রুতি দেন, যেগুলো কখনোই পূরণ হয় না। তিনি বলেছিলেন মার্কিন শিল্পখাতকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন। অথচ তার সময়ই প্রায় দুই লাখ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন।'
স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও হেরে গেলে ট্রাম্প ফল নাও মেনে নিতে পারেন। হোয়াইট হাউজে এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জো বাইডেন। হেরে গেলে ফল মেনে নেয়া হবে কীনা, সম্প্রতি এমন প্রশ্ন ট্রাম্পের রানিংমেট এড়িয়ে গেছেন বলেও অভিযোগ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তিনি বলেন, 'সবশেষ নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় ফল মেনে নেননি ট্রাম্প। এটি খুবই বিপজ্জনক। আপনারা কী খেয়াল করেছিলেন? আমি দেখেছি রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হেরে গেলে ফল মেনে নেয়া হবে কি না, এই প্রশ্নের উত্তর দেননি। তারা আসলে কী করতে যাচ্ছে, এটি চিন্তা করেই আমি উদ্বিগ্ন।'
বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিবাসীবিরোধী নীতির কারণে সমর্থন পাচ্ছে রিপাবলিকানরা। অন্যদিকে গর্ভপাতের স্বাধীনতা প্রশ্নে ইতিবাচক অবস্থান অনেক রাজ্যে এগিয়ে রাখছে ডেমোক্র্যাটদের। এতে নির্বাচনের ফল পাল্টে দিতে পারে দু'টি কিংবা একটি সুইং স্টেট। যদিও কামালার পক্ষে বাজি রাখছেন অনেকে।
ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের সিনিয়র ফেলো ড্যারেল এম ওয়েস্ট বলেন, 'শেষ পর্যন্ত খুবই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যেতে পারে। সম্ভবত একটি বা দুটি সুইং স্টেটের ওপর ফল নির্ভর করবে। তবে শেষ দুই মাসে নির্বাচনী দৌড়ে অংশ নেয়ার পর থেকে কামালার শক্তিশালী অবস্থান ডেমোক্র্যাটদের মনোবল বাড়িয়েছে।'
আগামী সপ্তাহে পেনসিলভিনিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় কামালার সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।