ইরানের ইসলামিক প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বৈরিতার ইতিহাস প্রায় অর্ধশতকের। কিন্তু এতকাল এ দ্বন্দ্ব অনেকটাই পর্দার আড়ালে বা বলা যায় কথার যুদ্ধেই সীমিত ছিল। যা মেটাতে কূটনীতিই যথেষ্ট হতে পারতো। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন বিমান হামলার মধ্য দিয়ে অনেকটাই ফিকে হয়ে এলো শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা। যা স্পষ্ট করেছে তেহরান।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, ‘ইরানকে কূটনীতিতে ফিরতে বলা অপ্রাসঙ্গিক কারণ আমরা কূটনীতির মধ্যেই ছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার মাঝখানে ইসরাইল তা ভেস্তে দিলো। এরপর ইউরোপীয়দের সাথে আলোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্র সে আলোচনা ভেস্তে দিলো। এমন কোনো সীমা নেই যা তারা অতিক্রম করেনি।’
ইরান-ইসরাইল সংঘাতের মাঝে তৃতীয় পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের পরবর্তী ধাপ এখনও স্পষ্ট নয়। ইসরাইলের সাথে নজিরবিহীন সংঘাতের এক সপ্তাহ পর মার্কিন হামলা। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবে পশ্চিমাপন্থি শাহ শাসনব্যবস্থার পতনের পর যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে পৌঁছেছে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী, সেটি মোটামুটি স্পষ্ট। তাও মার্কিন আগ্রাসনের সামনে নতি স্বীকারে নারাজ তেহরান। এ অবস্থায় ইরান-ইসরাইল সংঘাতের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেলে দিয়ে, মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির সবচেয়ে বড় আর ঝুঁকিপূর্ণ জুয়াটা খেললেন ট্রাম্প।
যদি সত্যিই ঘোষণা অনুযায়ী মার্কিন হামলার পাল্টা জবাব দেয় সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রশাসন। তাহলে ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে হলেও চুপ থাকবে না ওয়াশিংটনও। ইরানে মার্কিন সেনা তৎপরতা চলতে থাকলে, শুধু মধ্যপ্রাচ্যকে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকেও খাদের কিনারায় ঠেলে দেবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঘনিষ্ঠতম মিত্র হলেও সাত হাজার মাইল দূরের দেশ ইসরাইলের স্বার্থ উদ্ধারের যুদ্ধে যোগ দিয়ে ফেলার পর, পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে- সেটি আপাতত আয়ত্তে নেই মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধানের।
রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রধান গবেষক কোন্সতান্তিন ব্লোখিন বলেন, ‘যুদ্ধবাদী আচরণ এটি এবং পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তোলার মতো আগ্রাসী পদক্ষেপ। ইরানকে তো অবশ্যই জবাব দিতেই হবে। বেশ কয়েকটি সম্ভাবনা আছে। প্রথমটি হলো- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা। অনেকগুলো এমন আছে। দ্বিতীয়টি হল হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র অনেক আরব রাষ্ট্রের তেল রপ্তানি ব্যাহত হবে এতে।’
ইরানে হামলার সিদ্ধান্তে শুধু বিরোধী ডেমোক্র্যাট শিবির থেকেই নয়, কট্টর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি সমর্থকদের কঠোর সমালোচনাও সইতে হচ্ছে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে এ হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সীমাবদ্ধ থাকলেও হয়তো সমর্থকদের মানিয়ে নিতে পারবেন ট্রাম্প। কিন্তু হামলা-পাল্টা হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আরও বড় সংঘাতের দিকে এগিয়ে গেলে ঝুঁকিতে পড়তে পারে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ।





