ক্ষুধার যন্ত্রণার কাছে হারতে বসেছে গাজার ২০ লক্ষাধিক মানুষ

ক্ষুধার যন্ত্রণার কাছে হারতে বসেছেন গাজার ২০ লাখের বেশি মানুষ
ক্ষুধার যন্ত্রণার কাছে হারতে বসেছেন গাজার ২০ লাখের বেশি মানুষ | এখন টিভি
0

বোমা হামলায় বেঁচে গেলেও ক্ষুধার যন্ত্রণার কাছে হারতে বসেছেন গাজার ২০ লাখের বেশি মানুষ। ছয় সপ্তাহ ধরে বহির্বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন মৃত্যু উপত্যকায় ঢুকছে না এক ফোঁটা দানাপানি। বন্ধ দোকান, শূন্য কালোবাজারও। অসহায় জাতিসংঘও।

ক্ষুধায় কান্নারত সন্তানদের ভুলিয়ে রাখতে ভাত রান্না হচ্ছে বলে পাতিলে শুধু পানি সেদ্ধ করছিলেন মা। দারিদ্র্যের সে ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি দেখছে যুদ্ধকবলিত, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'মাছ-মাংসের স্বাদ ভুলে গেছি। কোনো খাবার নেই, পানি নেই। খুব অপমানিত বোধ হয়। খুব ধীরে ধীরে আমাদের মারতে চান নেতানিয়াহু।'

অন্য একজন বলেন, 'আর সহ্য করতে পারছি না। ভোর ৬টায় বের হই। দুপুর ২টার পর বাচ্চাদের কাছে ফিরি। পুরো সময় সারা শহরে দানের খাবার খুঁজে বেড়াই। এক থালা ভাতের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরি।'

ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গাজাকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে ইসরাইল। প্রবেশ করেনি ছিটেফোঁটা দানাপানি। অস্ত্রবিরতির সময় যা মজুত হয়েছিল, ফুরিয়েছে সব। দোকান বন্ধ, বাজার খালি, দাতব্য সংস্থার ভাণ্ডারও শূন্য। দেড় বছরের বিরামহীন বোমা হামলাও যাদের মারতে পারেনি, ক্ষুধার যন্ত্রণার কাছে হারতে বসেছেন মৃত্যু উপত্যকার বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'সীমান্ত না খুললে খাবারের অভাবে মানুষ মরবে। যুদ্ধে মরিনি, বিমান হামলাতেও বেঁচে গেছি। কিন্তু ক্ষুধা থেকে বাঁচতে পারবো না। সীমান্ত খুলে দিন। আমাদের বাচ্চাদের কিছু খেতে দিন।'

অন্য একজন বলেন, 'আল্লাহ'র নামে শপথ করে বলছি। বোমা হামলায় যদি নাও মরি, ক্ষুধা সহ্য না করতে পেরে সন্তানসহই একদিন মরে যাবো। খাবার খুঁজতে খুঁজতেই মরে যাবো। অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি, আমরা ক্লান্ত, আমাদের সমাধান দিন।'

২৫ কেজির এক বস্তা আটা আগে মার্কিন মুদ্রায় ছয় ডলারে বিক্রি হলেও এখন দাম ১০ গুণ বেশি। যুদ্ধে নিঃস্ব মানুষের সেসব কেনার সামর্থ্য কোথায়!

দোকানিদের মধ্যে একজন বলেন, 'এক কেজি ডালের দাম আজকে ২০ শেকেলস , আগে যেটা ছিল চার থেকে ছয় শেকেলস। চিনির দাম ছয় শেকেলস থেকে বেড়ে ৩৮ শেকেলস হয়েছে। রান্নার তেলের দাম সাত শেকেলস থেকে ৪০ শেকেলসে পৌঁছেছে।'

সীমান্ত বন্ধ থাকায় অবরুদ্ধ পশ্চিম তীর থেকেও গাজায় কিছুই ঢুকছে না; মিশর বা ইসরাইলি সীমান্ত পার করে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে পণ্য সরবরাহ তো দূরের কথা। উপত্যকাজুড়ে ২৫টি বেকারির মাধ্যমে রুটি সরবরাহ করছিল জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। সব বেকারি এখন বন্ধ। রেশন শূণ্যের কোঠায় পৌঁছেছে বলে শিগগিরই খাদ্য বিতরণ বন্ধের পথে ডব্লিউএফপি। সব মিলিয়ে তুমুল ঘাটতির কারণে খাবার, বিশুদ্ধ পানি আর ওষুধের মতো জরুরি নিত্যপণ্য এখন স্বর্ণের চেয়েও দামি।

ইউএনআরডব্লিউএ যোগাযোগ পরিচালক জুলিয়েট টোমা বলেন, 'নিত্যপণ্যের মজুত ফুরিয়েছে। বাজারেও কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। গাজায় একটা কালোবাজার ছিল। এখন সেখানেও আঁধার নেমে এসেছে। ভয়াবহ অনাহার গাজার দুয়ারে হানা দেয়ার অপেক্ষায়।'

দিনকে রাত বলার মতোই মিথ্যাচারিতা চালিয়ে যাওয়া ইসরাইল সব তথ্যপ্রমাণ আলোর মতো স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও গাজায় অনাহারের সত্য মানতে নারাজ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ত্রাণের অপব্যবহার করছে বলে দাবি ইসরাইলের। হামাসের অভিযোগ, যুদ্ধ জয়ে খাবারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। মার্চের শুরুতে ৪২ দিনের অস্ত্রবিরতি শেষ হওয়ার আগে, তীব্র অনাহারে থাকা উপত্যকার ২৩ লাখ বাসিন্দার জন্য ২৫ হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকেছিল গাজায়।

এসএস