বজ্রপাতের মতো বিদ্রোহীদের অভিযানে বাশার আল আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সিরিয়ার দৃশ্যপটে ওঠে আসছে তার অবৈধ মাদক সাম্রাজ্য। প্রমাণও মিলছে- আসবাবপত্র, কৃত্রিম ফল এবং ভোল্টেজ স্টেবিলাইজার মতো জিনিসপত্রের ভেতরে লুকিয়ে ক্যাপ্টাগন নামক নিষিদ্ধ ড্রাগ বাণিজ্যের।
দোমা শহরের পরিত্যক্ত গুদামের মতোই আরও বহু গোপন আস্তানা থেকে চলতো মাদক সরবরাহের প্রস্তুতি। যেখান থেকে মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে উপসাগরীয় দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিতে প্যাকেজিং করা হতো ভয়াবহ এই মাদক, এমনটাই দাবি বিদ্রোহী যোদ্ধাদের।
একজন বিদ্রোহী বলেন, 'এভাবেই তারা ড্রাগ মুড়ে বিদেশে পাঠাতো। বিশেষ করে এগুলো সৌদি আরবসহ পুরো উপসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতো। মাদক লুকানোর জন্য তারা তামাও ব্যবহার করেছে।'
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, বিশ্বের উৎপাদিত ক্যাপ্টাগনের ৮০ শতাংশই তৈরি হতো সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে। আত্মীয় স্বজন এবং ঘনিষ্ঠ সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে এই মাদক কারবার পরিচালনা করতেন আসাদ। এর মধ্য দিয়েই গৃহযুদ্ধে লিপ্ত সিরিয়া পরিণত হয়েছিল বিশ্বের নতুন এক মাদক রাজ্যে। বছরে আয় হতো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।
ক্যাপ্টাগন ঘুম ও ক্ষুধা নিবারণ ছাড়াও লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে মনস্তাত্ত্বিকভাবে শক্তি জোগায় বলে দাবি করে থাকে এর সেবনকারীরা। তবে এই মাদক কারবার বন্ধে এখন তৎপর সিরিয়ার নতুন প্রশাসন। তবে দেশটির টালমাটাল অর্থনীতি কীভাবে চাঙা হবে তাই এখন বড় প্রশ্ন।
দামেস্ক চেম্বার অফ কমার্সের প্রধান বাসেল হামউই বলেন, 'অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের উপর ভিত্তি করে একটি মুক্ত-বাজার ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। প্রত্যেক ব্যবসায়ী যাতে তাদের তাদের পছন্দসই বৈধ পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট বিনিময় ব্যবস্থার বাজার চালু করতে হবে।'
মূলত অবসাদ, সারাদিন ঘুম ভাব নিয়ন্ত্রণে ওষুধ হিসেবে ১৯৬০ এর দশকে ক্যাপ্টাগন পিলের প্রথম উৎপাদক ছিল জার্মানি। পরে দেখা যায় কয়েক বার খাওয়ার পরই রোগীরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়তেন। ১৯৮৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে ক্রমশ ক্যাপটাগন উৎপাদনে সিরিয়াকে মূল ডেরায় পরিণত করে তৎকালীন সরকার।