আসাদ সাম্রাজ্যের পতনে উল্লাস যেনো থামছেই না সিরিয়াবাসীর। পতাকা হাতে রাস্তায় মিছিল, সমাবেশ ও আতশবাজি ফুটিয়ে বিজয় উদযাপন চলছে। গেল ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তের দাঁড়িয়ে আছে সিরিয়া। ক্ষমতা নেয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী দেশকে কতটুকু স্থিতিশীল করতে পারবে, তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
সিরিয়ায় ব্যাংক, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছে। রাস্তায় ফিরছে যানবাহন। ধ্বংসস্তূপের পরিণত হওয়া বিভিন্ন শহরে চলছে সংস্কার ও মেরামতের কাজ। এছাড়া বাস্তুচ্যুত হওয়া বাসিন্দারাও ফিরছেন। লোকজনও বাজারে ভিড় করছে এবং ব্যবসা বাণিজ্যও চাঙ্গা হচ্ছে।
স্থানীয় একজন বলেন, 'আমরা কঠিন সময় পার করছি। আমাদেরকে এই চাপ সহ্য করতে হবে। ধীরে ধীরে আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবো।'
অন্য একজন স্থানীয় বলেন, 'আমরা আগের পরিস্থিতি থেকে এখন ভালো আছি। এ অবস্থার আরও পরিবর্তন হবে। আসাদ সরকার আমাদের অনেক কাজ করতে দেয়নি।'
বিদ্রোহী বাহিনীর সদস্যরা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আসাদের বাবা হাফিজ আল আসাদের কবর পুড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় বিদ্রোহীদের কয়েকজন পুড়ে যাওয়া কবরের পাশে পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে উল্লাস করেন। এদিকে বিদ্রোহী বাহিনীর দাবি, কুর্দি মিলিশিয়াদের কাছ থেকে পূর্ব সিরিয়ার দেইর এল-জোর শহরের সামরিক বিমানবন্দর সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। হায়াত তাহরির আল শামের নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা বাহিনী আশেপাশের অঞ্চলেও তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
সিরিয়ার বন্দর নগরী লাতাকিয়ায় ইসরাইলি হামলা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিরিয়াকে লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে তারা। তবে ইসরাইলিদের আক্রমণের কড়া নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর দাবি বলছে, সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে ইসরাইল যুদ্ধের চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। সিরিয়া সীমান্তের বাফার জোন থেকে ইসরাইলি সেনাদের প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স।
সিরিয়ায় স্থাপিত বিভিন্ন রাসায়নিক অস্ত্র কারখানার সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছে নতুন প্রশাসন। তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে তারা কী পদক্ষেপ নেয় দেখার জন্য অপেক্ষায় আছে পেন্টাগন।
পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিং বলেন, 'রাসায়নিক অস্ত্রের কারখানা সম্পর্কে বিদ্রোহীরা যে আশ্বাস দিয়েছেন তা খুব ভালো উদ্যোগ। তাদের এ ধরনের বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। তবে তাদের কথার সাথে কাজের মিল থাকতে হবে। আমরাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।'
এদিকে শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের পরই শর্তসাপেক্ষে সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় ইউরোপের দেশ স্পেন। সিরিয়ায় যেনো আইএস মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে এ কথা জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, 'সিরিয়ায় আইএস যেনো পুনর্গঠন না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। আইএসকে নির্মূল করতে হবে। তাদের উত্থান দেখতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সিরিয়ার অখণ্ডতা রক্ষায়ও যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে আগ্রহী।'
দেশ পুনর্গঠনে বদ্ধপরিকর বিদ্রোহী বাহিনী। আসাদ সরকারের আমলে যারা গুম ও হত্যার শিকার হয়েছেন তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আশ্বাস দিয়েছেন তারা।