গত ২৬ অক্টোবর চালানো বিমান হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলেও পাল্টা হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ইরান। এখন শুধু ক্ষণ নির্ধারণে চলছে আলোচনা। দেশটির ইসলামিক রেভুল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কমান্ডার ইসমাইল কাউসারির বরাত দিয়ে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
গাজা ও লেবাননে আগ্রাসনের জেরে গত এপ্রিল মাস থেকে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা চলছে। হামাস ও হিজবুল্লাহ'র শীর্ষ নেতা ও নিরীহ মানুষদের হত্যার জেরে গত পহেলা অক্টোবর তেল আবিবকে লক্ষ্য করে প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। আগের চেয়েও শক্তিশালী ওয়ারহেড যুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র ও অস্ত্র ব্যবহার করা হবে হুমকি দিয়েছে ইরান। অর্থাৎ এবারের হামলা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও আক্রমণাত্মক হবে।
সম্ভাব্য এ যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরইমধ্যে ইরানের হামলা থেকে ইসরাইলকে রক্ষায় মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছেছে মার্কিন বোমারু বিমান বি-ফিফটি টু। এমনকি তেহরান যদি সত্যি পাল্টা হামলা চালায় তাহলে তেল আবিবকেও আর আটকানো যাবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছে ওয়াশিংটন। এ অবস্থায় ইরান-ইসরাইলের সম্ভাব্য যুদ্ধ ঘনীভূত হওয়ার শঙ্কায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যে এখন উত্তেজনা তুঙ্গে।
এমন উত্তেজনার মধ্যেই মার্কিন দূতাবাস দখলের ৪৫তম বার্ষিকীতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি পতাকা পুড়িয়ে তেহরানে উল্লাস করেছেন ইরানিরা। এদিন আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলেছেন, তারা মুসলমানদের হত্যা করে টিকে থাকতে পারে না।
আইআরজিসির কমান্ডার জেনারেল হোসেইন সালামি বলেন, 'ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র গণহত্যা ও হত্যা চালিয়ে তাদের পতনশীল শাসনব্যবস্থার পরিচয় দিচ্ছে। রাজনৈতিক ব্যবস্থা যখন পতনের দিকে যায়, তখন অন্ধভাবে কাজ করে। ঠিক তাই করছে তারা। যদি এই আচরণ পরিবর্তন না করে, তাহলে তারা পতন ও ধ্বংসের দিকে যাবে।'
এদিকে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে থাকা সামরিক ঘাটিসহ দখলকৃত অঞ্চলের বসতিগুলোর ওপর ব্যাপক ড্রোন ও রকেট হামলা চালিয়েছে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এতে একজন অবৈধ বসতি স্থাপনকারী নিহতসহ বেশ কয়েকজন হতাহতের শিকার হয়েছেন।
এ অবস্থায় লেবানন ও ইসরাইল সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরাইলের উত্তরাঞ্চল নিরাপদ করতে হিজবুল্লাহকে লিতানি নদীর ওপারে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। বলেন, 'যুদ্ধবিরতি কিংবা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ছাড়াই উত্তরের বাসিন্দাদের শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে দিতে হিজবুল্লাহকে লিতানি নদীর ওপারে পাঠিয়ে দিতে আমরা যেকোনো পদক্ষেপ নেবো। উত্তরের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এটাই একমাত্র চাবিকাঠি।'
হিজবুল্লাহকে টার্গেটের নামে এরইমধ্যে লেবাননে আগ্রাসনের মাত্রা বাড়িয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। সবশেষ একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে কয়েকজন চিকিৎসককেও হত্যা করেছে। এর মধ্য দিয়ে লেবাননে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ছুঁইছুঁই অবস্থা। এমন আগ্রাসনের মাধ্যেই ইসরাইলি এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ করলো টাইমস অব ইসরাইল। যেখানে বলা হয়েছে, আগামী ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে লেবাননে হিজবুল্লাহ'র সাথে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে ইসরাইল।
এদিকে গাজায়ও বর্বর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। উত্তরের হাসপাতালগুলোতেও চালানো হচ্ছে আগ্রাসী হামলা। এতে নারী ও শিশুসহ হতাহতের সংখ্যাতো বাড়ছেই, সেই সঙ্গে গাজার উত্তরাঞ্চলে খাদ্য, সুপেয় পানি ও ওষুধ সংকটে ধুঁকছেন এক লাখের বেশি ফিলিস্তিনি। গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রাণহানি সংখ্যা ৪৩ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে।