পশ্চিমা বিশ্বে চীনা পণ্যের আধিপত্য ঠেকাতেই এই শুল্কযুদ্ধ!

পশ্চিমা বিশ্বে চীনা পণ্যের আধিপত্য ঠেকাতেই এই শুল্কযুদ্ধ!
পশ্চিমা বিশ্বে চীনা পণ্যের আধিপত্য ঠেকাতেই এই শুল্কযুদ্ধ! | Ekhon tv
0

পশ্চিমা বিশ্বে চীনা পণ্যের একচেটিয়া আধিপত্য ঠেকাতেই শুল্কযুদ্ধ জারি রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রয়োজনে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আঞ্চলিকভাবে চীনা পণ্যের বাজার নষ্ট করতেও পিছপা হবে না ওয়াশিংটন। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনমুখী বাণিজ্য ব্যবস্থা চালু করাই ট্রাম্পের নয়া শুল্কনীতির মূল লক্ষ্য।


এপ্রিলের শুরুতে বিশ্বব্যাপী আমদানি পণ্যে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুঁজিবাজারে ধস নামায় আগামী ৩ মাসের জন্য সম্পূরক শুল্কারোপ পিছিয়ে দিলেও বৈরিতা জিইয়ে রেখেছেন চীনের সঙ্গে।

হোয়াইট হাউজের দাবি, বেইজিং উৎসাহ দেখালে শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও চীনা থিংক ট্যাংক বলছে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্কের ধাক্কা টলাতে পারেনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কে।

যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের বড় বাজার থাকলেও, এর পরিমাণ চীনের মোট জিডিপির মাত্র দুই শতাংশ।

মার্কিন গণমাধ্যমে বারবার বলা হচ্ছে, নয়া শুল্কনীতির পেছনে আছে ট্রাম্পের রাজনৈতিক স্বার্থ। মূলত আমদানিনির্ভর হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিখাতে যে ভাটা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণের ম্যান্ডেট নিয়েই দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছেন এই রিপাবলিকান নেতা।

বিশ্লেষকদের মতে, রপ্তানি খাত চাঙ্গা করার যতগুলো উপায় রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম শুল্ক আরোপ নীতি।

অধ্যাপক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, 'আমেরিকা অনেকটাই আমদানি নির্ভরশীল, কিন্তু সেই মাত্রায় রপ্তানি হচ্ছে না। ট্রাম্প এই নির্ভরশীলতাটাকে কমিয়ে আনতে চান। এই কমিয়ে আনার যতগুলো পন্থা রয়েছে তার মধ্যে একটা পন্থা হলো এই ট্যারিফ চাপানো।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যে কোনো অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের পেছনে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কারণও থাকে। চীন যেভাবে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের বাজার দখল করছে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি। এমনকি ট্রেড ওয়ার শব্দটিও এসেছে ট্রাম্পের প্রথম শাসনামল থেকে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, শুল্কনীতির সাহায্যে যুক্তরাষ্ট্রকে উৎপাদনক্ষম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান ট্রাম্প।

ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, 'চীনের যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, এবং যেভাবে তারা ধীরে ধীরে বিশ্ব অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণে নেবার চেষ্টা করছে, সেটাকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি মনে করছে।'

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা না হলেও বড় কোনো সংকটে পড়বে না চীন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের বিকল্প পাওয়া গেলে ওয়াশিংটনের তোয়াক্কা করবে না বেইজিং।

কিন্তু দ্বিপক্ষীয় এই বিবাদ আঞ্চলিকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ যে সব দেশ চীনা পণ্য আমদানি করে তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ বা বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়, তা অবশ্যই বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।

ড. নিলয় বলেন, 'চীনা পণ্য অন্যরা যারা কিনছে, তাদের ওপর যদি আলাদা শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে সেটা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভভাব ফেলবে।'

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, অন্যতম দুই পরাশক্তি বিবাদে জড়ালে তার খেসারত দিতে হবে গোটা বিশ্বকে। এমনকি তাদের আশঙ্কা, এতে করে অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে জাতিসংঘ বা নিরাপত্তা পরিষদের মতো সংগঠনও।

এসএইচ