ফিলিস্তিনে বন্দিদের মুক্তি ও হামাস নির্মূলের নামে এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। একে একে হামাসের শীর্ষ নেতাদের হত্যার পরও যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। ইসরাইলে হামলা চালানো হামাসের মাস্টারমাইন্ড ইয়াহিয়া সিনওয়াকে হত্যার পরও তাদের আগ্রাসন থেমে নেই।
এরইমধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়েছে ইরান, লেবানন ইয়েমেনসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে। এই অঞ্চলে চূড়ান্ত বিজয় না আসা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিইয়ামিন নেতানিয়াহু।
তিনি বলেন, 'হামাসের মাস্টারমাইন্ড ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করেছি। সে ইসরাইলিদের শিরশ্ছেদ করেছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে, শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এর শাস্তি দিয়েছি। ইরানসহ অন্যান্য দেশ যারা ছায়াযুদ্ধে জড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ চালিয়ে যাবে ইসরাইল। এই যুদ্ধে ইসরাইল জয়ী হবে।'
বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা অজুহাতে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধকে প্রসারিত করার পাঁয়তারা করছেন নেতানিয়াহু। ব্যক্তিগত লাভের জন্যই তিনি এ পথে হাঁটছেন। কারণ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে করা জালিয়াতি, ঘুষ ও প্রতারণার তিনটি মামলা এখনও ঝুলছে। এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তার ১০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। ইসরাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘসময় প্রায় ১৭ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন নেতানিয়াহু।
এই মুহূর্তে যুদ্ধ শেষ হলে নিজ দেশে জনপ্রিয়তা হারাবেন এবং বিচারের মুখোমুখি হতে হবে তাকে। শক্তিশালী ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দিয়েই নেতানিয়াহু জনগণকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ভিজিটর ফেলোর ওমর রহমান বলেন, 'নেতানিয়াহুর মূল উদ্দেশ্য গাজা উপত্যকাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। যেখানে ইহুদিদের কর্তৃত্ব থাকবে। সেখানে কোনো আঞ্চলিক গোষ্ঠী থাকবে না। এই কারণেই তারা এ অঞ্চলে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। তারা সফল হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে তাদের লক্ষ্য এটাই।'
মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাতে রাজনৈতিক কোনো সমাধান নেই। জিম্মিদের উদ্ধারের নামে চলছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর আগ্রাসন। আর এতে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশ। বাইডেনের পর ট্রাম্পও নেতানিয়াহুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'নেতানিয়াহুর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। ইসরাইলকে সুরক্ষিত করতে তিনি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার জন্য তাকে অভিনন্দন। নেতানিয়াহু খুব ভাল কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি প্রায়ই আমাকে ফোন করে আমার মতামত নিয়ে থাকেন।'
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এতো সহজে দমে যাবে না ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসও। নেতৃত্ব সংকটে ভুগলেও সাংগঠনিকভাবে এখনও অনেক শক্তিশালী তারা। ফিলিস্তিনি জনগণের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে হামাস। ইসরাইলি রাজত্ব কায়েম করলেও প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা।