মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

পেজার বিস্ফোরণের পর ইলেকট্রনিক্স পণ্য রাখতে ভয়ে স্থানীয়রা

দুই দিনের ব্যবধানে লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে তারবিহীন যন্ত্রের বিস্ফোরণে ৩২ জন নিহতের ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে জনমনে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকানে এসব জিনিস রাখতে তারা এখন ভয় পাচ্ছেন। এসব ডিভাইস নিয়ে শঙ্কায় আছেন ব্যবহারকারীরাও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন দু'একটি ঘটনা পুরো ইলেকট্রনিক্স পণ্যের সরবরাহে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

পরপর দুই দিন লেবাননে একযোগে বিস্ফোরণের ঘটনা নাড়া দিয়েছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে। পেজার, ওয়াকিটকি, রেডিওসহ তারবিহীন বিভিন্ন ডিভাইস বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় আতঙ্কে আছেন লেবাননের বাসিন্দারা। এর মধ্যে গাড়ি, বাসায় ব্যবহৃত সৌর বিদ্যুতের যন্ত্র, মোবাইল ফোনের দোকানেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এরপর থেকেই বাসিন্দারা ব্যাটারি আছে এমন সব যন্ত্র ব্যবহারে ভয় পাচ্ছেন।

বিস্ফোরিত রেডিও, পেজারগুলো পাঁচ মাস আগে কিনেছিল লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযোগ, ইসরাইলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ আমদানি করা এসব ডিভাইসের মধ্যে আগে থেকেই বিস্ফোরক দিয়ে রেখেছিল। এ ঘটনায় লেবাননের পাশাপাশি জর্ডানও দায়ী করেছে ইসরাইলকে। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে তেল আবিব। এদিকে, সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সারা দেশে একযোগে ডিভাইস বিস্ফোরণের ঘটনায় নতুন হুমকি তৈরি হয়েছে গোটা লেবাননজুড়ে। ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকানদাররাও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে অনেক পণ্য সরিয়ে নিয়েছেন। অনেকে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় একজন বলেন, 'আমাদের পণ্যগুলো শতভাগ নিরাপদ। তবুও সতর্কতার জন্য কিছু জিনিস দোকান থেকে সরিয়ে ফেলেছি। আমরা এখন নিরুপায়। লিথিয়াম ব্যাটারি ও সৌর প্যানেল বিস্ফোরণের ঘটনা গুজব হতে পারে। অনেকে তাদের বাড়িতে এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে। কারণ সবার মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে।'

শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ব্যবহারকারীদের মধ্যেও। ব্যাটারি আছে এমন সব জিনিস ব্যবহারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বাসিন্দাদের মধ্যে। দেশজুড়ে আবারও এ ধরনের সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

স্থানীয় একজন বলেন, 'শত্রুরা আমাদের ভয় দেখানোর জন্য এ ধরনের নিকৃষ্ট কাজ করছে। আমরা এর প্রতিরোধ করবো। আমাদের লক্ষ্য থেকে সরে গেলে চলবে না।'

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যন্ত্রগুলোর ভেতরে ১০ থেকে ২০ গ্রাম করে উচ্চ বিস্ফোরক রাখা ছিল। আর হিজবুল্লাহদের ব্যবহৃত যোগাযোগ ডিভাইস পেজারের মধ্যে ১০ সেন্টিমিটার সাইজের ডিটোনেটর ফিট করা হয়েছিল। ডিটোনেটরের কাজ মূলত স্পার্ক তৈরি করা। যা ব্যাটারি অন্যান্য যন্ত্রের সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরণ ঘটায়।

সিকিউর ইলেকট্রনিক্সের সহযোগী অধ্যাপক ড. ব্যাসেল হালাক বলেন, 'কোনো ডিভাইসের বিস্ফোরণের জন্য পাঁচটি উপাদান প্রয়োজন। যার মধ্যে আছে একটি ধারক, ব্যাটারি, ট্রিগারিং ডিভাইস, ডেটোনেটর এবং বিস্ফোরক চার্জ। পেজারের মধ্যে এর মধ্যে তিনটি উপাদানই আছে। এর সঙ্গে একটি ডেটোনেটর ও চার্জ যুক্ত করলেই বিস্ফোরণ হতে পারে।'

বিদেশের মাটিতে অত্যাধুনিক অপারেশনের পরিচালনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের। গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর