গতকাল (সোমবার, ৬ মে) যখন মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি দেয় হামাস, তখনই রাস্তায় নেমে উল্লাস প্রকাশ করেন গাজাবাসী। সবার চোখে মুখে ছিল একটাই আশা, সম্ভবত এবার শান্তি নেমে আসবে উপত্যকায়। অনেকে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন মাটিতে, স্মরণ করেন সৃষ্টিকর্তাকে।
স্থানীয় একজন বলেন, 'আমি কতটা খুশি তা বলে প্রকাশ করতে পারবো না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের পাশে আছেন।'
তবে এই আনন্দ ম্লান হতে বেশি সময় লাগেনি। কারণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি ইসরাইল। জরুরি বৈঠকের পর দেশটির মন্ত্রিসভা জানিয়েছে, প্রস্তাবটিতে তেল আবিবের অনেক চাহিদার প্রতিফলন ঘটেনি। তাই রাফায় স্থল অভিযান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে মিশরের কায়রোতে পাঠানো হবে প্রতিনিধিদল। মূলত প্রস্তাবটিতে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ধারা রয়েছে যাতে সম্মতি দেয়নি ইসরাইল।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, 'জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছি। তবে পাশাপাশি উপত্যকায় আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।'
প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও। যদিও রাফায় স্থল অভিযান ফিলিস্তিনিদের ওপর বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে আবারও সতর্ক করেছে হোয়াইট হাউস। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষুধাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে রাফায় অভিযান চালাতে পারে ইসরাইল।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি, 'আইডিএফ এর অভিযান নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করবো না। তবে রাফায় অভিযান ১০ লাখের বেশি মানুষের জীবন শঙ্কার মুখে ফেলবে। নেতানিয়াহু'র সঙ্গে ফোনালাপে বিষয়টি প্রেসিডেন্ট বাইডেন আবারও পরিষ্কার করেছেন।'
হিউম্যান রাইট ওয়াচের পরিচালক ওমর শাকির, 'রাফায় স্থল অভিযান চালানো হলে ফিলিস্তিনে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। ইসরাইল সরকার ক্ষুধাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। এটি আসলে যুদ্ধাপরাধ। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণে দ্রুতই দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পরতে পারে।'
এদিকে রাফায় অভিযান চালানোর আগে সোমবার এলাকা খালি করতে উড়োজাহাজের মাধ্যমে লিফলেট ফেলেছে আইডিএফ। এতে অনেকেই ট্রাকে, গাঁধার গাড়িতে চেপে এমনকি পায়ে হেঁটে ছেড়েছেন শহর।
স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, 'আমি খান ইউনিসে যেতে চাই। কিন্তু কীভাবে সেখানে যাবো? সেখানে গেলেও আমরা বাস্তুচ্যুতই থাকবো। কোথায় যাবো জানি না। আর কতবার ছুটতে হবে? আরব দেশগুলো কোথায়? তারা কী আমদের দুঃখ দেখে না?'
মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদন বলছে, দ্রুতই মিশর সংলগ্ন রাফাহ ক্রসিং দখল করবে ইসরাইল। এতে উপত্যকা অভিমুখে সবধরনের ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে আইডিএফ। ইসরাইলের বিশ্বাস, ক্রসিং দখলের মাধ্যমে গাজায় হামাসের রাজত্ব শেষ হবে। ফিলিস্তিনিরা বুঝতে পারবে হামাসের শক্তিমত্তা শেষ হয়ে গেছে।